Skip to main content

Posts

Showing posts from 2016

ফ্রেমে বন্দী বিকেল

রাশেদকে ঘুম থেকে তোলা যাচ্ছে না। দুইদিন ধরে সে ঘুমিয়ে আছে। মেসের বড় ভাই, মিরাজ তাকে ডেকেই যাচ্ছে। না পেরে এক জগ পানি এনে রাশেদের গায়ে ঢেলে দিলো। রাশেদ ভ্রু কুচকে আধো চোখে মিরাজের দিকে তাকালো। মিরাজ বললো, “তোকে দুই দিন ধরে ডাকতে ডাকতে পাগল হয়ে গেছি। ওঠ। দিন দুনিয়ায় কি তোকে ঘুম থেকে ডেকে তোলা ছাড়া আমার আর কোনো কাজ নেই?”বলেই চেয়ার টেনে নিয়ে রাশেদের সামনে বসলো। রাশেদ কাঁচা ঘুম চোখে উঠে বসলো। ঝিমাতে ঝিমাতে বলল, “আমাকে ডেকে তোলা কি খুব দরকার ছিল? আমি কি আপনাকে দায়িত্ব দিয়েছিলাম?” মিরাজ বলল, “দরকার ছিল। এক ভদ্রলোক দুইদিন ধরে তোকে খুঁজছে। গত পরশুদিন আসছে। বিদায় করেছিলাম, আবার এসেছে। আমাকে অতিষ্ঠ করে ফেলছে। তার সাথে দেখা কর। কি দরকার দেখ। দেখে বিদায় কর। আমি গেলাম। আবার ঘুমাস না যেন।” রাশেদ বলল, “কোথায়?” “আমার রুমে আছে।” বলেই মিরাজ বের হয়ে গেলো। রাশেদ ভেজা কাপড় পাল্টে, হাই তুলতে তুলতে মিরাজের রুমে গেলো। সাদা পাঞ্জাবী পড়া একজন ভদ্রলোক চেয়ারে বসে আছেন। বয়স ৬০ এর কাছাকাছি হবে। মুখে কাঁচাপাকা দাড়ি। দীর্ঘ ক্লান্তভাব। সেই ক্লান্তি ভাব কাটিয়ে রাশেদকে দেখে সে খুশি হয়েছে এমন একটা

কোনো এক বর্ষায়

তখন ঝুম বর্ষা হচ্ছে। আমি পারমিতাকে নিয়ে দাড়িয়ে আছি একটা বাড়ির গেটের সামনে। আমাদের মাথার উপর কংক্রিটের ছোট ছাউনি। কোনো মতে বর্ষা থেকে রক্ষা। আমার কাছে স্বর্গ। খুব কাছাকাছি দাড়িয়ে আমরা। কিছুক্ষণ আগে পারমিতা কাঁদছিল। তার চোখের জলে কাজল লেপটে আছে। অদ্ভুত লাগছে দেখতে। অদ্ভুত লাগার মত কোনো ব্যাপার না। তারপরেও মুগ্ধ হয়ে দেখছি। ওর সব কিছুই খুব অদ্ভুত। খুব গভীর ভাবে যখন সে ভাবে তখন তার দুই ঠোটে কিছু ভাজ পড়ে। আমি অবাক হয়ে দেখি। ঠোটে পড়া সামান্য ভাজ এত অদ্ভুত হয় কিভাবে? কিংবা মাঝে মাঝে চোখের পাপড়িতে ভাজ পড়ে। ও যখন চোখ বন্ধ করে, আমি তাকিয়ে থাকি। বর্ননা করার ভাষা পাই না। পারমিতা মন খারাপ করে দাড়িয়ে আছে। রাস্তার দিকে তাকিয়ে বর্ষার ফোটা পড়া দেখছে। তবে এখন আর কাঁদছে না। আর আমি নির্লজ্জের মত দাড়িয়ে দাড়িয়ে তাকে দেখছি। এটা নিয়ে অবশ্য ওর এখন আর কোনো মাথা ব্যাথা নেই। একবার ঝাড়ি দিয়ে বলেছিল, "এ তোর সমস্যা কিরে? এভাবে কি দেখিস? প্রত্যেকদিন আমার দিকে এভাবে তাকায় থাকার কোনো মানে আছে?" আমি দাত বের করে এক গাল হাসি দিয়ে বলেছিলাম, "তুই বুঝবি নারে। তুই বুঝবি না।" এখন আর কিছু বলে ন

বৃত্তালাপ

এটা কোনো গল্প না। আমি প্রায় এমন হাবিজাবি চিন্তা করি। উর্বর মস্তিষ্কের কল্পনা। এর কোনো ভিত্তি নেই এবং বৃত্তালাপ বলার কারন, যখন এসব ভাবি মনে হয় আমি কোনো বৃত্তের মাঝেই আছি। সবকিছুই বৃত্ত। এমনকি পৃথিবীটাও। আমি ছাদে শুয়ে আছি। আমার আত্মা আমার শরীরে নেই। কোথায় যেন হারিয়ে গেছে। আমার ঠিক পাশে তাহসান গীটার হাতে বসে আছে। লাল রঙের জামদানী পড়ে তার সাথে মিথিলাও বসে আছে। তারা গান গাইছে। আমি মুগ্ধ হয়ে তাদের গান শুনছি। যত দূরে থাকো, এত কেন কাছে শেষ স্পর্শ তোমার, আজও আছে তারা গান গাইছে। আর আমি তাকিয়ে আছি চাঁদের দিকে। চাঁদের সাথে মেঘের ধরা-ছোঁয়া খেলাটাই আমার কাছে বেশি ভালো লাগে। হটাৎ আমাদের মাঝে রবি ঠাকুর উপস্থিত। তাহসান আর মিথিলা গান বন্ধ করে হতভম্ব হয়ে তাকিয়ে আছে। চাঁদের আলোয় স্পষ্ট রবি ঠাকুরকে বোঝা যাচ্ছে। রবি ঠাকুর বললেন, "সাগর, তোমাদের বাড়ির সিঁড়িঘরে আলো নেই কেন?" আমি বললাম, "চাঁদের আলোর সামনে নগণ্য বাল্বের আলো মানায় না যে!" তিনি বললেন, "আমি রবীন্দ্রনাথ বলে, আমার সামনে সস্তা সাহিত্য কপচাপে না। তোমাদের অন্ধকার সিঁড়িঘরে আমি উসঠা খেয়ে পড়ে গেছি। কালই আলোর ব্য

হঠাৎ বর্ষা, ভালোবাসার বর্ষা

নাটকের জন্য লিখেছিলাম। নাটক শুট করা হয়েছে। এখনো এডিট করা হয়নি। জুপন চন্দ্রাহত নামের একটা বাড়ির সামনে দাড়িয়ে আছে। বাড়ির নামটা সুন্দর। চন্দ্র দেখে আহত। এই বাড়িতে লামিয়া থাকে। সে আজ লামিয়াকে তার ভালোবাসার কথা বলবে। কয়েকদিন আগে সে লামিয়াকে দেখেছে। প্রেম ভালোবাসা থেকে সে আজীবন দুরেই থেকেছে। কিন্তু এই মেয়ের জন্য আজ সে বেয়াহার মতো সেই মেয়ের বাড়ির সামনে দাড়িয়ে আছে। এখন সকাল। একটু আগে জানালায় লামিয়ার সাথে চোখাচোখি হয়েছে। বাড়ির দারোয়ান কে বলেছে সে লামিয়ার সাথে কথা বলতে চায়, এই খবর ভিতরে চলে গেছে। বাড়ির সবাই একবার করে এসে দেখে যাচ্ছে জুপনকে। রোগা জীর্ণশীর্ণ একটা ছেলে। চুল উস্কখুস্ক। দেখেই বোঝা যায় বেকার। কিংবা ভিক্ষুক শ্রেণীর কেউ। সবাই একবার করে দেখছে আর মুখ বাকাচ্ছে। সব থেকে বেশি অবাক হয়েছে লামিয়া। সে এই ছেলেকে চেনেনা। ওই দিকে তার ভাই সুজন তাকে জেরা করেই যাচ্ছে সে চেনে কিনা। লামিয়া বারবার একটা কথাই বলছে যে সে চেনেনা। লামিয়াদের বাড়ির সামনের চায়ের দোকানে সুজন আর জুপন বসে আছে। সুজন আর জুপনের মধ্যে কথা হচ্ছে। সুজনঃ আপনি কে? জুপনঃ আমি জুপন। সুজনঃ লামিয়া কে চেনেন? জুপনঃ না চিনিন

একটি ইন্টার্ভিউ বোর্ড

কি নাম? - সিরাজুল ইসলাম। নাম তো দেখি সেকালের। - জ্বি স্যার। আমার জন্ম ১৯৮৮ সালে। টেবিলের ওপাশে বসা ভদ্রলোকটি চশমার ফাক দিয়ে ক্যান্ডিডেটের দিকে তাকালো। তারপর চোখ নামিয়ে হাতের ফাইলটা খুললো। ফাইলটা খুলতে খুলতে বললো, "প্রাইভেট ইউনিভার্সিটিতে পড়ে এত কম সিজিপিএ কেন?" - প্রাইভেট ইউনিভার্সিটির ছেলে মেয়েরা তো পড়াশুনা করেনা। তাই কম নাম্বার পায় আর কি। কথা তো ভালই শিখেছ। তুমি যে ইন্টার্ভিউ বোর্ডে আছো। সেই খেয়াল আছে? - জ্বি স্যার। অবশ্যই আছে স্যার। কি করবো স্যার বলেন, জবানটাই তো আছে। কথা না বললে তো আর ভাত জুটবে না। এমবিএ টা অন্তত পাবলিক ইউনিভার্সিটি থেকে করতে পারতে। - জ্বি স্যার, ভুল হয়ে গেছে। ওরা আমার জন্য একটা সিট খালি রেখেছিলো। ইস কেন যে গেলাম না। ভদ্রলোকের চোয়াল শক্ত হয়ে গেছে। কঠিন কিছু একটা বলতে যাবেন, তখন তার একটা কল আসলো। ফোনটা হাতে নিয়েই খুশিতে নড়েচড়ে বসলেন। ওপাশ থেকে কি বলছে শোনা গেলনা। শুধু এপাশ থেকে ভদ্রলোক স্যার স্যার করে গেলেন। দীর্ঘ ২ মিনিট কথা বলার পড়ে ফোন রাখলেন এবং ক্যান্ডিডেটের দিকে বিরক্ত নিয়ে তাকালেন। কি যেন নাম বললে তোমার? - স্যার, সিরাজুল

বাবা

সেসব কন্যাদের জন্য যারা তাদের প্রিয় বাবকে হারিয়েছে। বাবার ভালোবাসা অন্য জিনিস। মাপা যায় না। বর্ননা করা যায় না। অনুভব করতে হয়। পৃথিবীতে অনেক খারাপ মানুষ আছে তবে একজন খারাপ বাবা নেই। সাফায়েত সাহেব তার মেয়েকে নিয়ে পুকুর পাড়ে বসে হো হো করে হাসছেন। তার মেয়ে পুতুল। দেখতেও পুতুলের মত। সবে চতুর্থ শ্রেণিতে ভর্তি হয়েছে। বিরাট চঞ্চল। সারাদিন হৈ চৈ করে বেড়ায়। পুকুর ভালোবাসে। এই কিছুক্ষণ আগে পুতুলের মা আয়েশা পুতুলকে পুকুরে নামার জন্য বকা দিয়েছেন। এই নিয়ে নাকি আজ সে পাঁচবার পুকুরে নেমেছে। বাবা কিছু বলেননা। অনেক বেশি ভালোবাসেন পুতুলকে। পুতুল আনন্দ করে আর বাবা মুগ্ধ হয়ে দেখেন। মাঝে মাঝে যখন তার মা এই নিয়ে বকা ঝকা করেন তখন তিনি হো হো করে হাসেন। পেটে আগুন্তক নিয়ে পুতুলের মা খুব দুশ্চিন্তায় থাকেন মেয়েকে নিয়ে। কিন্তু কে শোণে কার কথা?  পুকুর পাড়ে বসে সাফায়েত সাহেব তার মেয়েকে বললেন, “তোকে না কতবার বারণ করেছি যখন তখন পুকুরে না নামতে, নামিস কেন?” পুতুল বলল, “বাবা, পুকুর ভালো লাগে, পুকুরের পানিতে লাফাতে আরও বেশি ভালো লাগে। আমি কি করবো?” সাফায়েত সাহেব হেসে দিয়ে বললেন, “ঠাণ্ডা বাধাবি তো।” পুত

অলস সম্পর্ক

উৎসর্গঃ আলমগীর রুমান পাগল পরিচালক। শুদ্ধতম মানুষ বলে একটা কথা আছে। সে শুদ্ধতম মানুষ কিনা জানিনা। কিন্তু শুদ্ধতম ভালোবাসা তার মাঝে আমি দেখেছি। শুদ্ধতম ভালোবাসায় সে অনেক উপরে যাবে এবং নিচে দাড়িয়ে আমি তাকে দেখবো, সেই প্রার্থনা করি। এসব কি? - সারপ্রাইজ। গিফট। ফাজলামি পাইছো? - ফাজলামি হবে কেন? তোমাকে গিফট দিতে পারি না? না পারো না। আমি তোমার কি লাগি? - দেখো, আমি তোমার কি হই না হই, সেটা জানিনা। তোমাকে গিফট দিতে ইচ্ছে হলো। দিলাম। বাকিটা তোমার ব্যাপার। বলেই সায়েম মালিহার বাসা থেকে বের হয়ে এলো। বাইরে বেশ ঠাণ্ডা পড়েছে। পাঞ্জাবিতে শীত মানাচ্ছে না। ইস যদি কুয়াশা পড়তো। লাভ তেমন কিছুই হতো না। মালিহা তো আর পাশে থাকতো না। ভুলটা তারই। ভালোবাসি বলে দূরত্ব বজায় রেখে এদিক ওদিক দৌড়ে বেড়িয়েছে। তাহলে কি আর ভালোবাসা হবে? এই দীর্ঘ সময়ে তার সাথে তিন চার বারের বেশি হাতে হাত রেখে হাঁটা হয়েছে বলে মনে হয়না। কেন মেয়েটা তারে ভালবাসবে? ভালোবাসা পাওয়ার মত তো সে কিছুই করেনি। তবুও তো অনেক দিয়েছে। সায়েম তার ভুল বুঝতে পেরেছে। সে আর একটাবার সুযোগ চায়। তাকে ভালোবাসার। দেখিয়ে দিতে চায়, সে আসলে কত

অভিমান

এক কাঁপ কফি বানাও না। - খামাখা এখন কফি বানাবো কি জন্য? একটু আগে না চা খেলে। খেতে ইচ্ছে করছে, খাবো না? - আচ্ছা, থাকো। আনতেছি। ওই, শোনো। - আবার কি? তোমার ওই নীল শাড়িটা আছে না? একটু পড়বা? দেখবো তোমায়। - আচ্ছা, এত ঢং আসে কই থেকে তোমার? হ্যাঁ? মেজাজ খারাপ লাগে তোমার ঢং দেখলে। নীলা গটগট করে হেঁটে বের হয়ে গেলো রুম থেকে। খেপে যাবার বদলে খুশি হওয়া উচিত ছিল। কিন্তু খুশি হবার কোনো কারন নেই। মানুষটা পাগল। যখন রোমান্স করতে ইচ্ছে করে, তখন সে থাকেনা। উদ্ভট উদ্ভট সময়ে তার মনে রোমান্স উতলে উতলে পড়ে। তখন প্রচণ্ড মেজাজ খারাপ হয়। সব ভেঙ্গে ফেলতে ইচ্ছে করে। পারলে পাগলটাকেও ধরে আছাড় মারতে ইচ্ছে করে। মানুষটা জানি কেমন কেমন। মনের মধ্যে এক গাদা প্রেম নিয়ে কাছে যাওয়ার পরে বলে, "চলো, ঘুম পাইছে। ঘুমাই।" নীলা দাঁতে দাঁত চেপে রেখে পানি গরম করছে। মাথা ঠাণ্ডা রাখার চেষ্টা। কিন্তু সফল হচ্ছে না। হাত পা কাঁপছে রাগে। কফি নিয়ে যাওয়ার পরে, কি না কি বলবে কিংবা করবে তখন আরও মেজাজ খারাপ হবে। গটগট করতে করতে আবার সে রুমে ঢুকল। রুম অন্ধকার। গেলো বারান্দায়। বারান্দায় গিয়েই নীলা হতভম্ব হয়ে গেলো

সিক্ত ভালোবাসা

উৎসর্গঃ   তানভী ইসলাম কুমকুম একটা প্রশ্ন করেছিলে। উত্তর দিতে পারিনি। তবে একটা কথা বলতে পারি। সবাই ভালবাসায় সিক্ত থাকতে পারে না। আমি ভালবাসায় সিক্ত থাকতে চাই। হারিয়ে যেতে চাই না। জাহান তাকিয়ে আছে পানির দিকে। তার এই পুকুরটা খুব প্রিয়। তার মন খারাপ থাকলে কিংবা খুব ভালো থাকলে সে এই পুকুর পাড়ে এসে বসে। আজ তার মন ভালো নাকি খারাপ বোঝা যাচ্ছে না। বিকেলের আলো এসে পড়েছে জাহানের মুখে। তাকে অপ্সরীর মত লাগছে। আজ বিকেলের আলো অনেক শান্ত। হয়ত জাহানের জন্য। জাহান অদ্ভুত ভাবে তাকিয়ে আছে পানির দিকে। নিজেকে চিনতে পারছে না। মনে হচ্ছে অন্য ভুবনের কেউ। আচ্ছা, এই অন্য ভুবন কি আদৌ আছে? সেখানে কি যাওয়া যায়? সেখানে গেলে কি তার সমস্ত স্মৃতি হারিয়ে যাবে? অন্তত গত আট বছর? নিজেকে ভুলে যাওয়া যাবে? অন্তত নিজের নাম? জাহান কাঁদছে। শব্দ করে না, নীরবে। সুর্য ডুববে। কোথাও কারোর বিয়ে হবে। জাহান প্রার্থনা করবে। নিস্তব্ধ প্রার্থনা। গুটিসুটি মেরে বসে থাকা জাহানের পাশে এসে পরিমনি বসলো। আপা আপনে কি কানতেছেন? - না। তাইলে আপনার চোখে পানি ক্যান? - আনন্দের পানি। কিসের আনন্দ? - হারিয়ে যাবার আনন্দ।

এক গুচ্ছ ভালোবাসা কিংবা ভুল

উৎসর্গঃ   সোফিনা ই আরব তোমার কাছ থেকেই প্রথম বই নিয়ে পড়তে শুরু করি। ভালো একটা অভ্যাস তুমি তৈরি করে দিয়েছ। সেই জন্য তোমাকে অসংখ্য ধন্যবাদ। গল্পটা কষ্ট করে পড়ার জন্যও ধন্যবাদ। আমার নিজের কোনো বোন নেই। তুমিই আমার বড় বোন। ভালোবাসি বললেই কি ভালোবাসা হয়ে যায়? তবে তোমাকে ভালোবাসি। অনেক বেশি "লাভলি" হও। অনেক বেশি "হ্যাপি" হও। নীলাকে লাল শাড়িতে অদ্ভুত লাগছে। সে একা একটা সোফায় মাথা নিচু করে বসে আছে। মনে হচ্ছে সোফায় একটা পুতুল বসে আছে। বাম পাশে তার বাবা তার সম্ভাব্য হবু শ্বশুরের সাথে কথা বলছে। আর ডান পাশে তার সম্ভাব্য শাশুড়ি তার দিকে ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে আছে। হয়ত তিনি জীবিতকালে এমন রূপবতী মেয়ে দেখেননি। নীলার কিছুটা বিরক্ত লাগছে। ক্যামেরার ক্লিক ক্লিক শব্দ কানে বাজছে। বেজেই যাচ্ছে। মাথা নিচু করে রাখা সত্ত্বেও ফ্ল্যাশের আলো চোখে লাগছে। এত কিছুর পরেও তার মাথায় সৈকত নামের একটা ছেলে কোনো রকম দুশ্চিন্তা ছাড়াই হেসে যাচ্ছে। হাসিটা সুন্দর। এই হাসি দেখেই যে মুগ্ধ হয়েছিল। কি আশ্চর্য ! ভুল সময়ে ভুল মানুষের কথা কেন চিন্তা হচ্ছে? সে তো সৈকতকে ভালোবাসেনি। যাকে

শেষ স্বপ্ন পূরণ

বাইরে বের হয়েই নিমোসীনির মেজাজ খারাপ হয়ে গেলো। একটা রিক্সা নাই। অবশ্য এতো ভোর বেলা রিক্সা পাওয়ার কথা না। কিন্তু তারপরেও তার মেজাজ খারাপ হচ্ছে। কারন সে চায়, অন্তত আজকের দিনটা পরিকল্পনা অনুযায়ী কাটুক। এটাই সমস্যা। পরিকল্পনা অনুযায়ী কিছুই হয়না। আরেকবার সব ঠিক আছে কিনা দেখে, গটগট করে গলির মোড়ের দিকে রওনা দিলো। মোড়ে গিয়ে দেখলো, মোটাসোটা একটা লোক রিক্সায় বসে ঝিমুচ্ছে। আর একটা রিক্সাও নেই। কোনো মতে লোকটাকে জাগিয়ে বলল, "মামা চলেন, টাকা বেশি দিবো। যত তাড়াতাড়ি পারেন চালাবেন।" বলেই রিক্সায় উঠে বসলো। ভাগ্য ভাল থাকলে ৮ টার মধ্যে জায়গা মত পোঁছালে হয়। নাহ, রিক্সা ভালোই চালাচ্ছে। ঝিমাতে ঝিমাতে কেউ এতো ভালো রিক্সা চালায় জানা ছিল না। নিমোসীনি দাড়িয়ে আছে একটা বাড়ির সামনে। বাড়ির নাম জ্যোৎস্নাবিলাস। নিমোসীনি প্রায় ভাবে, আর কিছু বাকি আছে এই বিলাসের আগে লাগানোর জন্য? তবে এটা ভালো লাগে। কেন লাগে তার কোনো ব্যাক্ষা নেই। সুরুজ মিয়া গেট খুলে বের হয়ে এলো। নিমোসীনিকে দেখেই এক গাল হাসি দিলো, বলল, "আপা আসছেন? ডাকেন নাই ক্যান?" নিমোসীনি বলল, "ডাকতে যাচ্ছিলাম তার আগেই আপনি বের

ফাঁসি

কাশেমকে মঞ্চে উঠানো হয়েছে। এই মঞ্চ যেন তেন মঞ্চ না। ফাঁসির মঞ্চ। কাশেম যখন মঞ্চে প্রথম পা রাখলো তখন তার শরীর শিরশির করে উঠলো। মনে হলো তার পায়ের নিচ থেকে মাটি সরে গেছে। তার হাত বাঁধা। তবে চোখ বাঁধা না। মঞ্চের নিচে একদিকে কাশেমের বাবা মা আর তার ছোট বোন দাড়িয়ে আছে। আর আরেকদিকে দাড়িয়ে আছে সুলতানার বাবা মা আর ভাই। যাকে কাশেম কিছুদিন আগে ধর্ষণ করেছে। এবং তারপরপরই সুলতানা আত্মহত্যা করেছে। মঞ্চের সামনে শুধু এই দুই পরিবারই না। আরও অসংখ্য মানুষ দাড়িয়ে আছে, কাশেমের ফাঁসি দেখার জন্য। দাড়িয়ে আছে দেশের বিখ্যাত সব পত্রিকার আর টিভি চ্যানেলের অসংখ্য সাংবাদিক আর ক্যামেরাম্যান। এই ফাঁসির দৃশ্য প্রতিটা চ্যানেলে সরাসরি দেখানো হচ্ছে। ছোট ছোট ছেলে মেয়েদের টিভি দেখতে দেওয়া হচ্ছে না। তবে কিছু ছেলে মেয়ে উকি মেরে দেখছে, কেন কি হচ্ছে টিভিতে। দেখার দরকার আছে, এদেরও জানা উচিত, ধর্ষণ কতটা নির্মম এবং গর্হিত কাজ। কাশেমের সামনে ফাঁসির দড়ি। আর আট মিনিটের মাথায় তার ফাঁসি হবে। তার অনেকে পিপাসা হচ্ছে। কিন্তু পানি তার জন্য নিষিদ্ধ। এই মুহূর্তে তার জন্য সব কিছুই নিষিদ্ধ। কাশেমের বাবা মা হাউমাউ করে কাঁদছে

হঠাৎ রাতে

উৎসর্গঃ  সাদমান নাজিম তোর সাথে এই গল্পের কোনো সম্পর্ক নেই। লিখছিলাম, হঠাৎ পাশে তাকিয়ে দেখি আজ তোর জন্মদিন। লিখতে লিখতে তোরে মিস করছিলাম। তুই এমন একজন মানুষ যাকে ভালো লাগে কিন্তু তাকে নিয়ে কিছু লেখা যায় না। ভালো থাকিস। শুভ জন্মদিন। কিছু পুলিশ রিক্সা থামাল। "ওই খাড়া। কই যাস, খাড়া।" আমি ততক্ষণে কাঁপছি। ভয়ে না, শীতে। রাত প্রায় দুইটা। জায়গাটা বেশ ফাঁকা। সামনে মিরপুর। রিক্সা থামল। ওরা ছিল ৫ জন। একজন কাছে এসে আমার দিকে তাকিয়ে বলল, "কি? এত রাতে কি? কই যাস?" আমি বললাম, "স্যার, বাসায় যাই।" স্যার বললেন, "নাম তুই। তোর বাসা কই?" আমি নামতে নামতে বললাম, "স্যার, শ্যামলী।" এত রাতে বাইরে কি করিস? স্যার, গার্লফ্রেন্ডের বাড়ির সামনে গেছিলাম। সরি বলতে। মনে হয় সম্পর্কটা টিকবে না। ফাজলামি করস? খাইসত কিছু? না স্যার, খুব ক্ষুধা লাগছে। এক প্লেট গরম ভাত হলে চলত। হঠাৎ চোখে মুখে আন্ধার দেখলাম এবং আমার মুখ যে কোনো কারনেই হোক এখন রিক্সাওয়ালার দিকে। কারনটা সাধারন। চড় খেয়েছি। গরম ভাতে বদলে চড়। ওদের মধ্যে থেকে একজন রিক্সাওয়ালাকে চলে যেতে বলল

ভুল

নাবিলা স্থির হয়ে তাকিয়ে আছে চাঁদের দিকে। সে বসে আছে ছাদের দেয়ালে হেলান দিয়ে। নীল রঙের শাড়িতে তাকে দেখাচ্ছে ইন্দ্রাণীর মতো। অসম্ভব মায়াকড়া দৃষ্টিতে সে তাকিয়ে আছে চাঁদের দিকে। চাঁদের সমস্ত আলো এসে পড়েছে তার মুখে। যেন এই আলো হাজার বছর ধরে অপেক্ষা করেছিল তাকে আলোকিত করার জন্য। কাছেই বসে আছে জামিল হোসেন। তার হাতে সিগারেট। মাত্র ধরিয়েছে। সে সিগারেটের ধোঁয়া ছাড়তে ছাড়তে অবাক হয়ে নাবিলার দিকে তাকিয়ে আছে। তার অবাক হবার প্রধান কারন হচ্ছে, একটা মৃত মানুষকে শুধু চাঁদের আলোতে এতোটা জীবন্ত, এতোটা প্রানবন্ত কিংবা এতোটা মায়াকড়া লাগতে পারে, তিনি ভাবতেই পারেননি। তিনি সামান্য কাঁপছেন। ঠিক মতো সিগারেট খেতে পারছেননা। আকাশটা আজ বেশ পরিষ্কার। ঠাণ্ডা বাতাসে তার চুল গুলো উড়ছে। মাঝে মাঝে তিনি হতাশ ভঙ্গিতে সিগারেটের ধোঁয়া উড়াচ্ছেন। তাকে দেখে মনেই হচ্ছে না যে সে কিছুক্ষণ আগে তার স্ত্রীকে বিষ খাওয়ায় হত্যা করেছেন। পরিকল্পিত হত্যা না। ঝোঁকের বশে হত্যা করেছেন। এখন বেশ অবাক হচ্ছেন। মাথার মধ্যে বারবার একটা কথা ঘুরপাক খাচ্ছে, “এ আমি কি করলাম? কি করলাম?” জামিল হোসেনের বাবা তাকে ছোটোবেলায় বলেছিলেন, “বাবা, রা

পুতুল

আমি মোটামুটি নিশ্চিত আমার সাথে কেউ হাঁটছে এবং মানুষটা যখন থেকে আমার সাথে হাঁটছে তখন থেকেই আমি অন্য রাস্তায় হাঁটছি। তবে মানুষটা যে মানুষ না সে ব্যাপারেও আমি মোটামুটি নিশ্চিত। অন্য রাস্তায় হাঁটছি সেটা বুঝতে পারছি কারন আমি রাস্তা চিনতে পারছি না। আমার পা কাঁপছে। রাত এতক্ষণে প্রায় দুইটা বাজার কথা। শীত পুরোপুরি পড়েনি। হালকা ঠাণ্ডা বাতাসে শরীর জমে যাচ্ছে। মনে হচ্ছে পাঞ্জাবি ভিজে গেছে। আমি কোনদিকে হাঁটছি কেনই বা হাঁটছি বুঝতে পারছি না। ইচ্ছা করছে সাথের মানুষটাকে জিজ্ঞাসা করি, “ভাই? আমরা কোথায় যাচ্ছি? আপনার কাছে সিগারেট হবে? খুব ভয় করছে। সিগারেট টানলে ভয় কিছুটা কমার কথা।” জিজ্ঞাসা করা সম্ভব না। কারন এখন মনে হচ্ছে, পা বাদে সমস্ত শরীর জমে গেছে। শীতে কিংবা ভয়ে। আট বছর পরে গ্রামে এসেছি। সেটা সমস্যা না। সমস্যা হচ্ছে এত রাতে বের হওয়া উচিত হয়নি। বিশ্বাস করা উচিত ছিল যে গ্রামে গঞ্জে এখনো ভুত আছে। ভুত? আচ্ছা মানুষটা কি আসলে ভুত? নাকি অশরীরী প্রেতাত্মা? নাকি অন্য কিছু? পরিবেশটা ঘোর লাগানো। আশেপাশে গাছপালা। কোথাও মাঠ। কোথাও পুকুর। মাঝে ভাঙ্গা রাস্তা। এমন ঘোর লাগা পরিবেশে বাতাসের শো শো শব্দে

অল্প সময়, অল্প প্রেম

বিয়ে বাড়ি মানেই খাওয়াদাওয়া, লাইটিং, সাজগোজ এইসব। কারো কাছে বিদায়ের অনুষ্ঠান। কারো কাছে কাউকে পাওয়ার অনুষ্ঠান। কেউ আসে বোরহানি খেতে, কেউ রোস্ট। কিন্তু আমার কাছে বিয়েবাড়ি মানে প্রেমে পড়া। তখন আমি বিয়েবাড়ি যেতাম কারো না কারো প্রেমে পড়তে। এমন করে কত প্রেমে পড়েছি তা প্রায় অজানা। একবারের গল্প বলি। গেলাম পরিচিত কারো বিয়ে খেতে (মনে নেই, কে ছিল)। প্রচুর সাজগোজ, প্রচুর লাইটিং। আমি রিক্সা থেকে নেমেই এদিক ওদিক করছি। বুঝতেই পারছেন কেন। বাড়ির ভিতরে পা রাখলাম। সাথে সাথেই আমার ভিতরে কি যেন একটা কাজ শুরু করলো, বলে বোঝানো যাবেনা। মনটা আরও বেশি চঞ্চল হয়ে গেলো। চলে গেলাম বউকে যেখানে রাখা হয়েছে সেখানে। গিয়েই হতভম্ব হয়ে গেলাম। মুগ্ধ হয়ে গেলাম। যে কারনে এসেছিলাম, সেটাই হলো। প্রেমে পড়ে গেলাম। ভাবছেন বউয়ের প্রেমে পড়ে গেছি। নাহ, বউয়ের পাশে বসে থাকা বউয়ের ছোট বোনের প্রেমে পড়েছি। মনে মনে হাসলাম, খুবই কমন একটা ব্যাপার। বউয়ের ছোটবোনকে ভাল লাগবে এটাই স্বাভাবিক। আমার মতই বয়স। এই ১৪ কিংবা ১৫ হবে। খুব লক্ষ্য করে দেখছিলাম তার কানের দুলটা তার হাসির সাথেই কিভাবে দুলছিল। সেকেন্ড যায় আর আমি মুগ্ধ হই। সে