Skip to main content

একটি ইন্টার্ভিউ বোর্ড

কি নাম?
- সিরাজুল ইসলাম।
নাম তো দেখি সেকালের।
- জ্বি স্যার। আমার জন্ম ১৯৮৮ সালে।

টেবিলের ওপাশে বসা ভদ্রলোকটি চশমার ফাক দিয়ে ক্যান্ডিডেটের দিকে তাকালো। তারপর চোখ নামিয়ে হাতের ফাইলটা খুললো। ফাইলটা খুলতে খুলতে বললো, "প্রাইভেট ইউনিভার্সিটিতে পড়ে এত কম সিজিপিএ কেন?"

- প্রাইভেট ইউনিভার্সিটির ছেলে মেয়েরা তো পড়াশুনা করেনা। তাই কম নাম্বার পায় আর কি।
কথা তো ভালই শিখেছ। তুমি যে ইন্টার্ভিউ বোর্ডে আছো। সেই খেয়াল আছে?
- জ্বি স্যার। অবশ্যই আছে স্যার। কি করবো স্যার বলেন, জবানটাই তো আছে। কথা না বললে তো আর ভাত জুটবে না।
এমবিএ টা অন্তত পাবলিক ইউনিভার্সিটি থেকে করতে পারতে।
- জ্বি স্যার, ভুল হয়ে গেছে। ওরা আমার জন্য একটা সিট খালি রেখেছিলো। ইস কেন যে গেলাম না।

ভদ্রলোকের চোয়াল শক্ত হয়ে গেছে। কঠিন কিছু একটা বলতে যাবেন, তখন তার একটা কল আসলো। ফোনটা হাতে নিয়েই খুশিতে নড়েচড়ে বসলেন। ওপাশ থেকে কি বলছে শোনা গেলনা। শুধু এপাশ থেকে ভদ্রলোক স্যার স্যার করে গেলেন। দীর্ঘ ২ মিনিট কথা বলার পড়ে ফোন রাখলেন এবং ক্যান্ডিডেটের দিকে বিরক্ত নিয়ে তাকালেন।

কি যেন নাম বললে তোমার?
- স্যার, সিরাজুল ইসলাম।
আমরা যেমন রেজাল্ট চেয়েছিলাম, তোমার তো সেই রেজাল্ট নেই। আচ্ছা ঠিকাছে দেখি কি করা যায়। তোমাকে আমরা জানাবো। তুমি আজ আসো।
- স্যার, চাকরিটা কি হবে?
সেটা তো এখন বলতে পারছিনা। আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
- স্যার কলটা কে করেছিল। জানতে পারি?
মানে?
- না মানে। যে চাকরিটা আমার হবার কথা ছিল সেটা কাকে দিচ্ছেন, জানতে পারলে খুশি হতাম আরকি।
ফাযলামি করো? আমার সাথে ফাযলামি? ফাযিল কোথাকার। গেট আউট।
- জ্বি স্যার, যাচ্ছি স্যার। স্যার একটা কথা। আপনার পাদে অনেক গন্ধ। রুমে একটু এয়ার ফ্রেশ মেরে নেবেন। গন্ধ থাকবে না।
ইউ ব্লাডি বাস্টার্ড। গেট দ্যা ফাক আউট অফ মাই অফিস। অর আই উইল ফাকিং কিল ইউ।

সিরাজ এক দৌড়ে বের হয়ে গেলো। যাওয়ার আগে রেস্টরুমে দাড়িয়ে একটা সিগারেট ধরিয়ে ম্যাচের কাঠির আগুন সোফায় লাগিয়ে দিয়ে গেলো। অফিসের বাইরে এসে হঠাৎ তার মনে হলো আজকের দিনটা ভালো যাবে। খুব ইয়ে চাপছে। রেস্টরুমেই কাজটা সেরে আসতে পারলে ভালো হতো।

তপ্ত রোদ মাথায় নিয়ে সিরাজ হাঁটছে। ঠিক এই মুহূর্তে বাংলাদেশের অনেকেই বিভিন্ন জায়গায় তার মতো হতাশার বোঝা নিয়ে হাঁটছে। এটা ভাবতে ভালো লাগছে। সিরাজ বুঝে গেছে তার চাকরি হবে না। অন্য কিছু করে খেতে হবে। সিরাজের একটা স্বপ্ন আছে। ফিল্ম বানাবে। যে ফিল্ম মানুষের কথা বলে। মনের কথা বলে।

হঠাৎ তার স্বপ্ন ফিসফিস করে বলে উঠলো, "আচ্ছা আমাদের সিস্টেম এত খারাপ কেন?" সিরাজ সিগারেটের শেষ টান দিয়ে বলল, "আমরা মানুষ খারাপ বলে।"

Comments

Popular posts from this blog

রহস্যময় ভালবাসা

ভুমিকা ভুমিকা সাধারনত উপন্যাসের হয় কিংবা রচনা জাতীয় কোনো লেখায় হয়। একটা গল্পের জন্য ভুমিকা লেখা হাস্যকর। তবুও লিখলাম। এই গল্পের সাথে বাস্তবের কোনো মিল নেই। এটা শুধুই কল্পনা দিয়ে লেখা। তবে নাম গুলোর অস্থিত্ত্ব আছে। ভুতের গল্প লিখতে চেয়েছিলাম। যে গল্প মাথায় ছিল সেটা তেমন ভয়ঙ্কর বলে আমার মনে হলো না। কিংবা আমি হয়ত ভয়ঙ্কর কিছু লিখতে পারতাম না। তাই লিখলাম না। আশা করি এই গল্পটা পড়ে খুব বেশি বিরক্ত হবেন না। যদি আপনার ভালো লাগে তাহলে ধন্যবাদ। ভালো না লাগলেও ধন্যবাদ।  ইশতিয়াক আহমেদ চৌধুরী টুটপাড়া ঘোষের ভিটা, খুলনা ২০.০৯.২০১২  উৎসর্গ  একটা মানুষকে কি দুইবার উৎসর্গ করা যায়? এইটা সেই মানুষটার জন্য, যার কাছেই শুধুমাত্র আমি একজন লেখক। যার কাছে আমার ভালো কাজেরও মূল্য আছে, খারাপ কাজেরও মূল্য আছে। আমার অদ্ভুত আচরণে সে বিরক্ত হয়, আসলে সে মুগ্ধ হয় বলে আমার বিশ্বাস।  মানুষটা আমাকে অনেক ভালোবাসে, এত কেন ভালোবাসে, কিভাবে ভালোবাসে, আমি কিছুই জানিনা। আমার প্রিয় হলুদিয়া পাখি একটা মেয়ে কতটা সুন্দর হলে একটা ছেলে মেয়েটার দিকে মন্ত্রমুগ্ধ হয়ে তাকিয়ে থাকে? একটা মেয়ে ঠিক কতটা সুন্দর হলে

Veer Zaara

  Spoiler Alert শুরুতেই ইয়াশ চোপড়ার ম্যাজিকাল কণ্ঠে কবিতা। কবিতা শেষ হওয়া মুহুর্তেই সনু নিগম আর লতা গেয়ে ওঠে আমার প্রিয় সব থেকে ম্যাজিকাল গানটা, “কিউ হাওয়া আজ ইউ গা রা হি হে”। সনুর কণ্ঠের সাথে কণ্ঠ মিলিয়ে স্ক্রিনে চলে আসে আমার প্রিয় সুপারস্টার শাহরুখ খান। সাদা জামা পড়ে সাদা নৌকায় ভেসে প্রকৃতির সাথে মিশে যাওয়ার দৃশ্য আমাকে আজও অনুপ্রেরণা দেয় প্রকৃতির সাথে এভাবে একাত্বতা ঘোষনা করার। মুভির শুরুতেই এই গান মনের মধ্যে একটা প্রশান্তি দেয়। মুভি দেখার আগ্রহ কয়েকগুন বাড়িয়ে দেয়।   এই গান শেষ হওয়া মুহুর্তেই দেখা যায়, বৃদ্ধ বীর প্রতাপ সিং স্বপ্নে জারা হায়াত খানকে গুলি খেতে দেখে ধরফর করে ঘুম ভেঙ্গে উঠে বসে। শাহরুখ খানের এই বৃদ্ধ চরিত্র তার ক্যারিয়ারে উজ্জ্বল নক্ষত্র হয়ে থাকবে আজীবন। ২২ বছর ধরে বীর প্রতাপ সিং নিজেকে জেলে বন্দী করে রেখেছে। এই ২২ বছরে কারো সাথে একটা কথা পর্যন্ত বলেনি। শুধুমাত্র জারার সন্মান রক্ষার্থে। কেউ তার গল্প জানেনা। হঠাৎ একদিন সামিয়া সিদ্দিকি নামের একজন হিউমান রাইটস লয়ার এগিয়ে এলো এই বীর প্রতাপ সিং এর গল্প জানার জন্য। ২২ বছর ধরে যেই মানুষটাকে সবাই কয়েদী নম্বর ৭৮৬ ব

Anveshanam (2020)

No Spoiler মুভির নাম Anveshanam , এটি একটি মালায়ালাম মুভি। মুভিতে একটা দৃশ্য দেখে বহু বছর পরে বুক কেঁপে উঠেছিলো। অত্যন্ত চমৎকার একটা মুভি। সিরিয়াল কিলার রিলেটেড থ্রিলার মুভি দেখতে দেখতে বিরক্ত ধরে গেলে চট করে এই হাসপাতাল পরিবেশে বানানো থ্রিলার মুভিটি দেখে ফেলুন। থ্রিলার মুভির নানান ধরণ আছে। আমার কাছে এই ধরণের থ্রিলার বেশি ভালো লাগে। সব থেকে বেশি ভালো লেগেছে এর ব্যাকগ্রাউন্ড মিউজিক। দূর্দান্ত লেগেছে। প্লট অনুযায়ী পারফেক্ট মিউজিক।   আমি প্রথমে ট্রেইলার দেখেছিলাম। ট্রেইলার অর্ধেক দেখেই আমার আগ্রহ জাগে এবং সাথে সাথে ডাউনলোড দিয়ে দেখতে বসে গেছি। আপনারা চাইলে ট্রেইলারটা দেখে আসতে পারেন। আগ্রহ জাগানোর জন্য প্লট সম্পর্কে একটু বলি। হাসপাতালে একটা বাচ্চা ভর্তি হয়েছে। বলা হচ্ছে বাচ্চাটা এক্সিডেন্ট করেছে। পুলিশ এসে ইনভেস্টিগেশন শুরু করলে দেখা যায় বাচ্চার বাবা মা থেকে শুরু করে প্রত্যেকে প্রত্যেকের জায়গা থেকে মিথ্যা কথা বলছে। কিছু একটা লুকাচ্ছে। কি লুকাচ্ছে? সেটাই রহস্য। এই রহস্যে জানতেই মুভিটা দেখতে হবে।   এই মুভির কোনো রিভিউ আমার চোখে পড়েনি। কিন্তু এই মুভি নিয়ে যথেষ্ট আলোচনা করা উচি