Skip to main content

কাভি হা কাভি না

 

শাহরুখ খানের কোন মুভিটা আপনার প্রিয়? অসংখ্যবার এই প্রশ্নের সম্মুখীন হয়েছি। আমার পক্ষে এই প্রশ্নের উত্তর দেওয়াটা যথেষ্ট কষ্টসাধ্য। তারপরেও যদি এই প্রশ্নের উত্তর দিতেই হয় তাহলে বলবো, আমার দেখা সব থেকে প্রিয় মুভি, “কাভি হা কাভি না”। সব থেকে প্রিয় দৃশ্য এটি। বুকে চিনচিন করে ব্যাথা হয়েছিলো। ঠিক যেরকম ব্যাথা সুনীল পেয়েছিলো এই দৃশ্যে। মধ্যবিত্ত একটা ছেলের বাস্তব জীবনের প্রায় প্রতিটা সত্য দৃশ্যকে সিনেমাটিক ভাবে তুলে ধরা হয়েছে এই মুভিতে। এই একটা মুভি যেখানে শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত ব্যার্থতার গল্পই দেখানো হয়েছে খুব পরিপাটিভাবে। যখন মুভিটা শেষ হয়, সব শেষ হয়ে যায় তখন আবার সুনীল আশায় বুক বাধে। নতুন কোনো স্বপ্ন এসে নতুন করে মোড় নেয় জীবনে।

আপনি যাকে ভালোবাসবেন, সে আপনাকে ভালোবাসবে না। আপনি যে লক্ষ্যের পিছনে ছুটবেন, সেই লক্ষ্যে আপনার হাতে ছুই ছুই করবে, কিন্তু ধরা দিবে না। আপনি আপন মনে নিজের কষ্ট দূর করার জন্য গান করতে চাইবেন, পারবেন না। কেউ না কেউ এসে বাঁধা দিবেই।
 
এই দৃশ্যটা কেন প্রিয় সেটা একটু বলি। মুভিটা একটা ড্রিম সিকোয়েন্স দিয়ে শুরু হয়। আবার সেই ড্রিম সিকোয়েন্সে এসেই মুভিটা শেষ হয়। ড্রিম সিকোয়েন্সে দেখা যায়, সুনীল বিয়ে করে আনাকে। কিন্তু ড্রিম সীকোয়েন্সে ঘটে যাওয়া হুবহু একই ঘটনা ঘটে তার বন্ধুর জীবনে। মানে আনাকে বিয়ে করে সুনীলের বন্ধু ক্রিশ। যেখানে সুনীল থাকে ক্রিশের বেষ্ট ম্যান। সুনীল সেটা মেনে নেয়। সুনীলের কষ্টে তার ছোট বোন কাদে। আনার বাবার মন খারাপ হয়। চার্চের ফাদার আড়ালে একবার সুনীলের দিকে তাকায়। বিয়ে কিন্তু হয় ক্রিশের সাথেই। ঠিক যখন ক্রিশ আনাকে আংটি পড়াতে যায় তখনি আংটিটা ক্রিশের হাত থেকে পড়ে যায়। ঠিক যেমনটা দেখানো হয়েছিলো সুনীলের ড্রিম সিকোয়েন্সে। সবাই আংটিটা খুঁজতে থাকে। কেউ পায়না। শুধু সুনীলের চোখেই আটকা পড়ে আংটিটা। তখন সুনীল তাকায় আনার দিকে। আনা বলে, “সুনীল, আংটিটা পেয়েছো?” সুনীল ভাবতে থাকে, 'কি বলবো আমি? আংটিটা পেয়েছি? নাকি আরেকবার চেষ্টা করবো? বলবো, আংটিটা পাইনি। তারপরে কোনো একভাবে সেটা লুকিয়ে ফেলবো। এই বিয়ে ভেংগে যাবে। তারপরে হয়তো আমার সাথেই বিয়েটা হবে। আরেকবার চেষ্টা করি।' এটা ভেবেই সুনীল মাথা নাড়িয়ে বলতে যায়, না আংটিটা পাইনি। ঠিক তখনি ক্রিশ বলে, "আংটি পাওয়া গেছে"।
 
হার মেনে নেওয়ার পরেও অনেক সময় শেষ চেষ্টাটা করতে ক্ষতি নেই। লক্ষ্যটা তো আমার। স্বপ্নটা তো আমার। স্বপ্ন আমাকে না চাইতেই পারে। আমি চাইলে ক্ষতি কি? এই মুভিতে আনা হচ্ছে প্রতিটা মধ্যবিত্ত ছেলের জন্য একটুকরো স্বপ্নের রুপক। সেই স্বপ্ন পূরনের জন্য মানুষ কত কি’ই না করে। কখনো মিথ্যা কথা বলে। কখনো নিজের সাথে বকবক করে। কখনো ঘুমের মধ্যে হাত নাড়ে। কিন্তু স্বপ্নটা ধরা ছোয়ার বাইরেই থাকে। ধরা দেয় না। একটা দৃশ্যে আনা নিজের চোখেই দেখতে পায়, সুনীল আনাকে কত ভালোবাসে। আনা নিজের মুখে সেটা স্বীকারও করে। কিন্তু লাভ কি? আনার ভালোবাসাটা মূখ্য থাকে। সুনীলের ভালোবাসাটা সুনীলের কাছেই তুচ্ছ ভাবে থেকে যায়।
সুনীল জীবনে অনেক কিছুই পাবে। কিন্তু নিজের চোখের সামনে তার নিজের স্বপ্ন অন্য কেউ ছিনিয়ে নিয়ে গেলো। এই কষ্টটা সে বুকেই রেখে দিবে। সেই কষ্ট নিয়ে সে ব্যর্থ প্রেমিকের মত, ব্যর্থ মানুষের মত, বিচরণ করবে জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত।
 
বলিউডের অনেক ক্লাসিক হিন্দি মুভি আমি দেখেছি। অনেক অসাধারণ মুভির তালিকা আমার কাছে আছে। কিন্তু এই মুভি, শুধু মাত্র এর শেষ এই দৃশ্যের জন্য এবং এই মুভি দেখে আমার যে অনুধাবন হয়েছে তার জন্য আমার কাছে আজীবন খুব বিশেষ একটা মুভি হয়ে থাকবে। আর অন্য কোনো হিন্দি মুভিতে আমি এমন সুন্দর শেষ দেখিনি। একটু কষ্ট, একটু আশা, একটু ব্যর্থতা। সব কিছু মিলিয়ে চমৎকার ভালো লাগার একটা মুভি।
মুভির একটা গানের কথা না বললেই নয়, ‘এ কাশ কে হাম’। গানের কথাগুলো আমার খুব প্রিয়। গানটা গেয়েছেন, কুমার শানু। এই গানটা এবং এই মুভিটা দুইটারই একটা মজার বিষয় হলো, আপনি গানটা যত শুনবেন, তত ভালো লাগবে। মুভিটাও ঠিক একই রকম। আপনি যতবার দেখবেন, ভালো লাগা বাড়তে থাকবে। আমার ক্ষেত্রে এমনই হয়েছে। প্রথম দেখায় কিংবা শোনায় আমি মুভিটা কিংবা গানের গভীরতা বুঝতে পারিনি। যত শুনেছি, যত দেখেছি, গভীরতা বুঝতে পেরেছি। ভালো লাগা বাড়তে শুরু করেছে।
 
প্রিয় সুপারস্টার,
আপনার প্রতি ভালো লাগা আমার এখনো এক বিন্দু কমেনি। প্রথম ভালো লাগার মত এখনো ভালো লাগে। এখনো স্ক্রিনে আপনি এলে আমি মুগ্ধ হই। আপনার বয়স বাড়ুক আর নাই বাড়ুক। আপনি বাকি জীবনে আর কোনোদিন কোনো মুভি বানান আর নাই বানান। আপনি শাহরুখ খান, আমার কাছে শাহরুখ খানই থাকবেন, আজীবন। একজন ফ্যান হয়ে এই কথা আমি আপনাকে দিলাম। ভালো থাকুন। সুস্থ থাকুন। আপনার জন্য ভালোবাসা।
শুভ জন্মদিন।

Comments

Popular posts from this blog

রহস্যময় ভালবাসা

ভুমিকা ভুমিকা সাধারনত উপন্যাসের হয় কিংবা রচনা জাতীয় কোনো লেখায় হয়। একটা গল্পের জন্য ভুমিকা লেখা হাস্যকর। তবুও লিখলাম। এই গল্পের সাথে বাস্তবের কোনো মিল নেই। এটা শুধুই কল্পনা দিয়ে লেখা। তবে নাম গুলোর অস্থিত্ত্ব আছে। ভুতের গল্প লিখতে চেয়েছিলাম। যে গল্প মাথায় ছিল সেটা তেমন ভয়ঙ্কর বলে আমার মনে হলো না। কিংবা আমি হয়ত ভয়ঙ্কর কিছু লিখতে পারতাম না। তাই লিখলাম না। আশা করি এই গল্পটা পড়ে খুব বেশি বিরক্ত হবেন না। যদি আপনার ভালো লাগে তাহলে ধন্যবাদ। ভালো না লাগলেও ধন্যবাদ।  ইশতিয়াক আহমেদ চৌধুরী টুটপাড়া ঘোষের ভিটা, খুলনা ২০.০৯.২০১২  উৎসর্গ  একটা মানুষকে কি দুইবার উৎসর্গ করা যায়? এইটা সেই মানুষটার জন্য, যার কাছেই শুধুমাত্র আমি একজন লেখক। যার কাছে আমার ভালো কাজেরও মূল্য আছে, খারাপ কাজেরও মূল্য আছে। আমার অদ্ভুত আচরণে সে বিরক্ত হয়, আসলে সে মুগ্ধ হয় বলে আমার বিশ্বাস।  মানুষটা আমাকে অনেক ভালোবাসে, এত কেন ভালোবাসে, কিভাবে ভালোবাসে, আমি কিছুই জানিনা। আমার প্রিয় হলুদিয়া পাখি একটা মেয়ে কতটা সুন্দর হলে একটা ছেলে মেয়েটার দিকে মন্ত্রমুগ্ধ হয়ে তাকিয়ে থাকে? একটা মেয়ে ঠিক কতটা সুন্দর হলে

Veer Zaara

  Spoiler Alert শুরুতেই ইয়াশ চোপড়ার ম্যাজিকাল কণ্ঠে কবিতা। কবিতা শেষ হওয়া মুহুর্তেই সনু নিগম আর লতা গেয়ে ওঠে আমার প্রিয় সব থেকে ম্যাজিকাল গানটা, “কিউ হাওয়া আজ ইউ গা রা হি হে”। সনুর কণ্ঠের সাথে কণ্ঠ মিলিয়ে স্ক্রিনে চলে আসে আমার প্রিয় সুপারস্টার শাহরুখ খান। সাদা জামা পড়ে সাদা নৌকায় ভেসে প্রকৃতির সাথে মিশে যাওয়ার দৃশ্য আমাকে আজও অনুপ্রেরণা দেয় প্রকৃতির সাথে এভাবে একাত্বতা ঘোষনা করার। মুভির শুরুতেই এই গান মনের মধ্যে একটা প্রশান্তি দেয়। মুভি দেখার আগ্রহ কয়েকগুন বাড়িয়ে দেয়।   এই গান শেষ হওয়া মুহুর্তেই দেখা যায়, বৃদ্ধ বীর প্রতাপ সিং স্বপ্নে জারা হায়াত খানকে গুলি খেতে দেখে ধরফর করে ঘুম ভেঙ্গে উঠে বসে। শাহরুখ খানের এই বৃদ্ধ চরিত্র তার ক্যারিয়ারে উজ্জ্বল নক্ষত্র হয়ে থাকবে আজীবন। ২২ বছর ধরে বীর প্রতাপ সিং নিজেকে জেলে বন্দী করে রেখেছে। এই ২২ বছরে কারো সাথে একটা কথা পর্যন্ত বলেনি। শুধুমাত্র জারার সন্মান রক্ষার্থে। কেউ তার গল্প জানেনা। হঠাৎ একদিন সামিয়া সিদ্দিকি নামের একজন হিউমান রাইটস লয়ার এগিয়ে এলো এই বীর প্রতাপ সিং এর গল্প জানার জন্য। ২২ বছর ধরে যেই মানুষটাকে সবাই কয়েদী নম্বর ৭৮৬ ব

Anveshanam (2020)

No Spoiler মুভির নাম Anveshanam , এটি একটি মালায়ালাম মুভি। মুভিতে একটা দৃশ্য দেখে বহু বছর পরে বুক কেঁপে উঠেছিলো। অত্যন্ত চমৎকার একটা মুভি। সিরিয়াল কিলার রিলেটেড থ্রিলার মুভি দেখতে দেখতে বিরক্ত ধরে গেলে চট করে এই হাসপাতাল পরিবেশে বানানো থ্রিলার মুভিটি দেখে ফেলুন। থ্রিলার মুভির নানান ধরণ আছে। আমার কাছে এই ধরণের থ্রিলার বেশি ভালো লাগে। সব থেকে বেশি ভালো লেগেছে এর ব্যাকগ্রাউন্ড মিউজিক। দূর্দান্ত লেগেছে। প্লট অনুযায়ী পারফেক্ট মিউজিক।   আমি প্রথমে ট্রেইলার দেখেছিলাম। ট্রেইলার অর্ধেক দেখেই আমার আগ্রহ জাগে এবং সাথে সাথে ডাউনলোড দিয়ে দেখতে বসে গেছি। আপনারা চাইলে ট্রেইলারটা দেখে আসতে পারেন। আগ্রহ জাগানোর জন্য প্লট সম্পর্কে একটু বলি। হাসপাতালে একটা বাচ্চা ভর্তি হয়েছে। বলা হচ্ছে বাচ্চাটা এক্সিডেন্ট করেছে। পুলিশ এসে ইনভেস্টিগেশন শুরু করলে দেখা যায় বাচ্চার বাবা মা থেকে শুরু করে প্রত্যেকে প্রত্যেকের জায়গা থেকে মিথ্যা কথা বলছে। কিছু একটা লুকাচ্ছে। কি লুকাচ্ছে? সেটাই রহস্য। এই রহস্যে জানতেই মুভিটা দেখতে হবে।   এই মুভির কোনো রিভিউ আমার চোখে পড়েনি। কিন্তু এই মুভি নিয়ে যথেষ্ট আলোচনা করা উচি