Skip to main content

Posts

Showing posts from July, 2013

স্মৃতি রোমান্থন

সময় সন্ধ্যা। ঝুম বৃষ্টি হচ্ছে। কোচিং থেকে বের হলাম। ভিজতে ভিজতেই বাসার দিকে রওনা দিলাম। কিছুদুর এগিয়ে গিয়ে দেখি শোভা তার মাকে নিয়ে একটি চায়ের দোকানের পাশে দাড়িয়ে আছে। ওরা আগেই বের হয়েছে। কিন্তু বৃষ্টির জন্য আটকে গেছে। আমি গিয়ে বললাম, “অ্যান্টি, রিক্সা পাচ্ছেন না?” “না বাবা, বৃষ্টি মনে হয় এখনি কমে যাবে। বাসা কাছে তো, তাই ভাবলাম একটু দাড়াই। তুমি ভিজছো কেন? ঠাণ্ডা লাগবে তো।” “সমস্যা নেই অ্যান্টি। শোভা, চা খাবা?” “হ্যাঁ খাওয়া যায়।” “অ্যান্টি খাবেন?” অ্যান্টি কিছু বলল না। আমার দিকে তাকিয়ে হেসে দিলো। মেয়েও এক গাল হাসি দিয়ে আমার দিকে তাকিয়ে আছে। আমি চায়ের কথা বললাম। “শোভা, নামো। এত সুন্দর বৃষ্টি হচ্ছে, ভিজবা না?” শোভা অ্যান্টির দিকে কাতর চোখে তাকাল। “আমার দিকে তাকাচ্ছিস কেন? যা ভেজ। পড়ে ঠাণ্ডা লাগালে, দেখিস।” ততক্ষণে চা হয়ে গেছে। আমি শোভাকে আর অ্যান্টিকে চায়ের কাপ দিলাম। আর নিজেও কাপ নিলাম। “বৃষ্টিতে ভিজতে ভিজতে চা খাবা?” “বললাম তো, নেমেই দেখো। অনেক মজা আছে।” শোভা চায়ের কাপ হাতে নিয়ে, এক গাল হাসি দিয়ে আমার সামনে এসে দাঁড়ালো। আর আমি মুগ্ধ হয়ে ওর দিকে হাসিহাসি মু

শুভ্র, মা আর ভালোবাসা

শুভ্র ছাদে বসে আছে। হাতে কফির মগ। শুভ্র কফির মগে একটা করে চুমুক দিচ্ছে আর ভোর হওয়া দেখছে। আজ আবহাওয়াটা অনেক সুন্দর। কিছুক্ষণ পর পর একটা বাতাস এসে শুভ্রর চুল গুলো উড়িয়ে নিয়ে যাচ্ছে। শুভ্র কি যেন একটা ভাবছে। ঠিক বোঝা যাচ্ছে না। এর মধ্যে জাহানারা বেগম ছাদে চলে আসলেন। এসেই বলতে শুরু করলেন। “কিরে তুই এতো ভোরে ছাদে কি করিস? তোর শরীর খারাপ? জ্বর আসছে? কি হইছে বল না।” বলেই তিনি শুভ্রর গায়ে হাত দিলেন। কপ ালে হাত রাখলেন। শুভ্র বলল, “না মা। আমার কিছু হয় নি। সব ঠিক আছে। আমি ছাদে তোমার জন্য অপেক্ষা করছিলাম।” জাহানারা তার ছেলের কপাল থেকে হাত সরিয়ে নিলেন। আর বললেন, “আমার জন্য? তুই কি করে বুঝলি যে আমি ছাদে আসবো?” শুভ্র তার মায়ের হাতটি ধরে আবার তার কপালে রাখলো আর বলল, “মা, তুমি রোজ ভোরে লুকিয়ে লুকিয়ে আমার ঘরে এসে আমাকে দেখে যাও। আমি জানি। তাই আজ ইচ্ছা করে অনেক ভোরে ছাদে এসে বসে আছি এবং আমি জানি তুমি আমাকে আমার ঘরে না পেয়ে এখানে খুঁজতে চলে আসবে।” বলেই শুভ্র তার মায়ের দিকে তাকিয়ে অসম্ভব সুন্দর একটা হাঁসি দিলো। জাহানারা মুগ্ধ হয়ে তার ছেলের দিকে তাকিয়ে আছেন। তিনি প্রায়ই ভাবেন, তার

হুমায়ূন আহমেদ এবং আমি

মাঝ রাত। আমার ঘুম ভেঙ্গে গেলো। প্রায় রাতে এই সময়ে আমার ঘুম ভেঙ্গে যায়। আমার বিছানার পাশেই জানালা। আমি তাকিয়ে দেখি, একজন ভদ্রলোক জানালার সামনে চেয়ারে বসে আছেন। তিনি জানালার বাইরে আকাশের দিকে তাকিয়ে আছেন। খুব সম্ভব জ্যোৎস্না দেখছেন। আমার দিকে তাকিয়ে বললেন, “দুঃখিত, আপনার ঘুম ভাঙ্গিয়ে দিলাম।” আমি মুখটা হাঁসি হাঁসি করে বললাম, “ব্যাপার না। কিন্তু, আপনি কে বলুন তো?” তিনি আমার দিকে তাকিয়ে খুব স্বাভাবিক ভ াবেই বললেন, “আমি হুমায়ূন আহমেদ।” আমি একটুখানি বিস্মিতবোধ করলাম। তারপর এক গাল হাঁসি দিয়ে বললাম, “ও স্যার আপনি? তাইতো বলি এত চেনা চেনা লাগে কেন? আসসালামুয়ালাইকুম, স্যার কেমন আছেন?” স্যার বললেন, “জ্বি, ভালো আছি।” তো স্যার, হটাৎ আপনি এখানে? জ্যোৎস্না দেখতে এলাম। অনেকদিন জ্যোৎস্না দেখি না। মনটা কেমন জানি করছিলো। খুব ভালো করেছেন, স্যার। কি খাবেন বলেন? কিছু খাবোনা। আমাকে বিরক্ত করবেন না, জ্যোৎস্না দেখতে দিন। জ্বি স্যার। অবশ্যই স্যার, অবশ্যই। স্যার, মিসির আলি স্যার আর হিমু ভাইজান কেমন আছেন? স্যার একটু বিরক্ত হয়ে আমার দিকে তাকিয়ে যথাসম্ভব ঠাণ্ডা গলায় বলল, মিসির আলির মাথা নষ্ট হ

ওসমান গনি

“কোনো মানুষ যখন একই কাজ দুইবার করে তখন তাকে কি বলা হয়?” আমি বললাম, “পাগল।” জাহিদুর রহমান বললেন, “হ্যাঁ, তবে সুস্থ মানুষও কিন্তু একই কাজ দুইবার করে। যেটা সে সবসময় বুঝতে পারেনা।” “ঠিক বুঝলাম না। বুঝিয়ে বলেন।” “বলছি, তার আগে বলুন চা খাবেন তো? আমি আর কিছু বানাতে পারি আর না পারি চা’টা ভালো বানাতে পারি, সে কথা জানেন নিশ্চয়ই?” আমি হেসে দিয়ে বললাম, “সে কথা আর বলতে? আমি আপনার কাছে আসিই তো আপনার হাতের এক কা প চা খাওয়ার লোভে। কতদিন আসা হয়না এদিকে।” “ওকে। আপনি বসুন। আমি মিনিট পাঁচেকের মধ্যে আসছি।” জাহিদুর রহমান একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের কেমিস্ট্রি বিভাগের অধ্যাপক ছিলেন। এখন অবসরে আছেন। অবসর বলতে তিনি ইচ্ছা করেই অধ্যাপনা ছেঁড়ে দিয়েছেন। এখন সারাদিন বাসায় পরে থাকেন আর পড়াশুনা করেন। ভদ্রলোক বিবাহ করেননি। খুবই সাধারন একটা মানুষ। কারো সাতেও থাকেন না, পাঁচেও থাকেন না। জাহিদুর রহমান চা নিয়ে চলে এলেন। আমি চা এর কাপ হাতে নিতে নিতে বললাম, “হ্যাঁ, এবার আমাকে বিষয়টা বুঝিয়ে বলুন।” “ধরুন আপনি রিক্সা করে কোথাও যাচ্ছেন। হটাৎ আপনার কেন জানি মনে হলো যে আপনি রিক্সা থেকে পড়ে যাবেন। কিন্তু পড়েননি। দু’মাস

আমি সে এবং আত্মহত্যা

আমি বসে আছি রেলষ্টেশনের একটি বেঞ্চে। ষ্টেশনে লোকজন কম। ভর দুপুরের রোদ কেটে গেছে। বিকালটা অনেক সুন্দর। তারপরেও কেন জানি একটা ক্লান্তি লাগছে মনে। হটাৎ একটা মেয়ে এসে বেঞ্চের ওপর প্রান্তে বসলো। দেখতে রূপবতী। নীল শাড়ি পড়া। চোখে কাজল। উদাস মনে বসে রেললাইনের দিকে তাকিয়ে আছে। তবে যে কোনো কারনেই হোক, মেয়েটির দিকে তাকিয়ে থাকতে অনেক ভালো লাগছে। চোখ দুইটা খুব দেখতে ইচ্ছা করছে। যাদের হার্টে সমস্যা আছে তাদের এই ধরনের রূপবতী মেয়েদের চোখের দিকে তাকানো উচিত না। হার্টফেল করার সম্ভবনা থাকে অনেকখানি। মেয়েটির দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে বললাম, “আত্মহত্যা করতে এসেছেন?” মেয়েটি ভ্রু কুচকে আমার দিকে তাকালো। যথেষ্ট অবাক হয়েছে বোঝা যাচ্ছে। মেয়েটি বলল, “জ্বি? কি বললেন?” আমি হাঁসি হাঁসি মুখ করে বললাম, “বলছি, আত্মহত্যা করতে এসেছেন?” “কি সব আজগুবি কথা বলছেন? আমি আত্মহত্যা করতে যাবো কেন?” “দেখে তো তাই মনে হচ্ছে। যে ভাবে রেললাইনের দিকে তাকিয়ে আছেন। মনে হচ্ছে রেল লাইনের সাথে ডিল করছেন যে আপনি তার উপর ঝাঁপিয়ে পরবেন আর সে আপনাকে খুশি খুশি মনে জড়িয়ে ধরবে। সত্যি বলছি, ঘটনা সত্যি হলে বেচারা রেললাইন কিন্ত

ওরা বাচ্চা ছেলে না, ওরা রাস্তার ছেলে

রাত বাজে প্রায় সাড়ে নয়টা। ইউনিভার্সিটি’র একটা প্রোগ্রাম ছিলো। ছোটদের আমন্ত্রন আর বড়দের বিদায় প্রোগ্রাম। প্রোগ্রাম প্রায় শেষের পথে। আমি আর আমার বন্ধুরা বের হয়ে এসেছি। চায়ের দোকানের পাশে বসে আড্ডা দিচ্ছি। প্রোগ্রামে আমাদেরকে একটি করে খাবারের প্যাকেট দিয়েছে। আইটেম গুলো হচ্ছে আপেল, সন্দেশ, স্যান্ডউইচ আর একটা কোল্ড-ড্রিঙ্কস। যে যারটা খেয়ে ফেলেছে। দুই একজন রেখে দিয়েছে বাড়ি গিয়ে আয়েশ করে খাবে। রাস্তার ওপা শে হোটেলের আলো এসে আমাদের এদিকে পড়েছে। আমি আমার প্যাকেট খুলতে যাবো দেখি দুইটা বাচ্চা ছেলে আমাদের আশেপাশে ঘুরঘুর করছে। বাচ্চা ছেলে ঠিক না, ওরা হচ্ছে রাস্তার ছেলে। দুইজনেরই আট দশ বছরের বেশি বয়স হবেনা। আমার দুই একজন বন্ধু দাড়িয়ে দাড়িয়ে খাচ্ছিলো। দেখলাম ছেলে দুটো রাজ্যের আগ্রহ নিয়ে তাকিয়ে আছে। ওরা আসলে কোল্ড-ড্রিঙ্কস এর বোতল গুলো নিতে এসেছে। এক একজন খাওয়া শেষে বোতল গুলো ফেলে দিচ্ছে আর ওরা টুপ করে বোতলগুলো নিয়ে গায়েব করে ফেলছে। গায়েব করেই আবার হাঁ করে আমাদের খাওয়া দেখছে। আর আমি তাকিয়ে আছি ওদের দিকে। বুকের ভিতরটা জানি কেমন করে উঠলো। হটাৎ এক বন্ধু বিরক্ত নিয়ে ওদের দিকে তাকিয়ে বলল,

আব্দুল গনি

আব্দুল গনির হাত পা বাঁধা। তাকে রাখা হয়েছে উঠানের এক কোণায়। সিদ্দিকুর রহমান গ্রামের চেয়ারম্যান। খুবই ভয়ঙ্কর মানুষ। রেগে গেলে তিনি কি করেন নিজেই হিসাব রাখতে পারেন না। আজ তিনি দুইজনের উপর ভয়ঙ্কর ভাবেই রেগেছেন। একজনকে উঠানের মাঝখানে বস্তার মধ্যে ভরে মারা হচ্ছে। এরপর আব্দুল গনি সিরিয়ালে আছেন। আব্দুল গনিকে চেয়ারম্যানের লোকজন তার বাড়ি থেকে মারতে মারতে এখানে নিয়ে এসেছেন। এখন তিনি কি করবেন কিছুই বুঝতে পারছ েন না। ভয়ে তার কলিজা শুখায় গেছে। দৌড় দিয়ে পালাবেন, সেই উপায় নেই। চেয়ারম্যান সিদ্দিকুর রহমান হুংকার দিলেন, “ওই, ওরে নিয়ে আয়।” কয়েকজন গিয়ে আব্দুল গনিকে এনে চেয়ারম্যানের সামনে রাখলো। চেয়ারম্যান সাহেব আব্দুল গনির দিকে তাকিয়ে বললেন, “তোর নাম যেন কি?” আব্দুল গনি কাঁপা কাঁপা গলায় বলল, “জ্বি। আব্দুল গনি” “তোর মার কাছে আমি কত টাকা পাই?” “জ্বি। পাচ হাজার টাকা।” “তোর মা কই?” “জ্বি। তিনি মারা গেছেন।” “মাগী আমার টাকা না দিয়ে মরলো ক্যান?” আব্দুল গনি হতভম্ব হয়ে তাকিয়ে আছেন। কি বলবেন কিছুই বুঝতে পারছেন না। চেয়ারম্যান সাহেব আবার বললেন, “তুই আমার টাকা দুই দিনের মধ্যে দিতে পারবি?” আব্দুল

আজ আমার পাশে কেউ নেই

হাবিবুর রহমান বিয়ে করেছেন। তিনি অনেক উত্তেজিত। বিয়ে পারিবারিকভাবেই হয়েছে। তিনি এখন বাসর ঘরে যাওয়ার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছেন। বাসর ঘরে গিয়ে কি করবেন কিছুই বুঝে উঠতে পারছেন না। অনেকে কানে কানে এসে দুষ্টু বুদ্ধি দিচ্ছে আর তিনি বারবার লজ্জায় লাল হয়ে যাচ্ছেন। সম্পূর্ণ অপরিচিত একটা মেয়ের সাথে বাসর ঘরে তিনি কি কথা বলবেন ভেবেই কুল কিনারা করতে পারছেন না। অবশেষে সেই প্রতিক্ষিত সময় এলো, তিনি বাসর ঘরের দিকে পা বাড়ালেন। মেয়ের নাম নাজিয়া আহমেদ। দেখতে রূপবতী। হাবিব প্রথম দর্শনে তার প্রেমে পড়ে গেছেন। নাজিয়া লাল শাড়ি পড়ে বিছানার ঠিক মাঝখানে জুবুথুবু হয়ে বসে আছে। হাবিব ঘরে ঢোকার সাথে সাথেই নাজিয়া মাথাটা নিচু করে ফেললো। তিনি ভয়, উত্তেজনা আর শঙ্কা নিয়ে বিছানার কাছে গেলেন এবং বিছানায় বসে বেশ ভয়ে ভয়ে বললেন, “তোমাকে দেখতে অদ্ভুত সুন্দর লাগছে।” নাজিয়া চুপ করে রইলো। তিনি বললেন, “কিছু বলো।” বেশ কিছুক্ষণ পর নাজিয়া ক্ষীণ গলায় বলল, “আপনার কাছে আমার একটা আবদার আছে।” হবিব বেশ খুশি হয়ে বললেন, “বলে ফেলো।” নাজিয়া বলল, “আমি না চাওয়া পর্যন্ত আপনি আমাকে স্পর্শ করবেন না।” হাবিব খানিকটা অপ্রস্তুত হয়ে গেলো। ত