আজ আমার পাশে কেউ নেই

হাবিবুর রহমান বিয়ে করেছেন। তিনি অনেক উত্তেজিত। বিয়ে পারিবারিকভাবেই হয়েছে। তিনি এখন বাসর ঘরে যাওয়ার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছেন। বাসর ঘরে গিয়ে কি করবেন কিছুই বুঝে উঠতে পারছেন না। অনেকে কানে কানে এসে দুষ্টু বুদ্ধি দিচ্ছে আর তিনি বারবার লজ্জায় লাল হয়ে যাচ্ছেন। সম্পূর্ণ অপরিচিত একটা মেয়ের সাথে বাসর ঘরে তিনি কি কথা বলবেন ভেবেই কুল কিনারা করতে পারছেন না। অবশেষে সেই প্রতিক্ষিত সময় এলো, তিনি বাসর ঘরের দিকে পা বাড়ালেন।

মেয়ের নাম নাজিয়া আহমেদ। দেখতে রূপবতী। হাবিব প্রথম দর্শনে তার প্রেমে পড়ে গেছেন। নাজিয়া লাল শাড়ি পড়ে বিছানার ঠিক মাঝখানে জুবুথুবু হয়ে বসে আছে। হাবিব ঘরে ঢোকার সাথে সাথেই নাজিয়া মাথাটা নিচু করে ফেললো। তিনি ভয়, উত্তেজনা আর শঙ্কা নিয়ে বিছানার কাছে গেলেন এবং বিছানায় বসে বেশ ভয়ে ভয়ে বললেন, “তোমাকে দেখতে অদ্ভুত সুন্দর লাগছে।” নাজিয়া চুপ করে রইলো। তিনি বললেন, “কিছু বলো।” বেশ কিছুক্ষণ পর নাজিয়া ক্ষীণ গলায় বলল, “আপনার কাছে আমার একটা আবদার আছে।” হবিব বেশ খুশি হয়ে বললেন, “বলে ফেলো।” নাজিয়া বলল, “আমি না চাওয়া পর্যন্ত আপনি আমাকে স্পর্শ করবেন না।” হাবিব খানিকটা অপ্রস্তুত হয়ে গেলো। তিনি এই ধরনের কোনো কথা আশা করেননি। তিনি বললেন, “অবশ্যই। তুমি না চাইলে আমি তোমাকে স্পর্শ করবো না। তবে আমার একটা কথা বলার ছিলো।”

“কি কথা?”
“আমি তোমাকে ভালোবাসি।”
“আপনি তো আমাকে চেনেনই না ঠিক মত, তাহলে ভালবাসলেন কিভাবে?”
“তাতো জানিনা। তোমাকে যেদিন প্রথম দেখি, সেদিন থেকেই তোমাকে আমি ভালোবাসি।”
“ওটা শারীরিক আকর্ষণ। এর বেশি কিছুনা।”
“কি জানি। হতে পারে। তবে ওদিনের পর থেকে একটাই কথা শুধু মনে হয়, তোমাকে ছাড়া একটা দিন, একটা রাত কাটানো আমার পক্ষে অসম্ভব।”
“আমার অনেক ঘুম পেয়েছে। আমি ঘুমাবো।”
“এত তাড়াতাড়ি? আসো কিছুক্ষণ গল্প করি।”

নাজিয়া কোনো উত্তর না করে প্রায় সাথে সাথেই ঘুমিয়ে পড়লো। হাবিব জেগে রইলেন। যতক্ষণ জেগে ছিলেন, বউয়ের পাশে বসে বউয়ের অদ্ভুত সুন্দর মুখটার দিকে তাকিয়ে ছিলেন। কিছুক্ষণ পর উঠে বারান্দায় গিয়ে সোফার উপর শুয়ে পড়লেন।

এরপর প্রায় তিন মাস হয়ে গেছে। নাজিয়া হাবিবকে তার শরীর স্পর্শ করতে দেয়নি। তিনি এই নিয়ে কোন উচ্চবাচ্য করেননি। তবে আশায় থেকেছেন কবে তিনি তার প্রিয়তমাকে জড়িয়ে ধরতে পারবেন। কবে তিনি তার প্রিয়তমার ঠোঁট চেপে ধরে চুমু দিতে পারবেন। হাবিব নাজিয়ার মন পাওয়ার জন্য অনেককিছুই করেন। প্রায় অফিস থেকে বাসায় আসার পথে ফুল কিনে আনেন। চকলেট কিনে আনেন। মাঝে মাঝে হটাৎ দুপুরে বাসায় এসে হাজির হন আর বলেন “চলো তোমাকে নিয়ে আজ বাহিরে খাবো।” নাজিয়া সাথে সাথে না করে দেয়। তবুও তিনি নিরাশ হননা। যেন তিনি এক খেলায় নেমেছেন, তার প্রিয়তমার মন জয় করার খেলা। তবে মাঝে মাঝে তিনি মন খারাপ করে সারারাত না ঘুমিয়ে বারান্দায় বসে থাকেন। বুকের মাঝে অজানা চাপা একটা কষ্ট অনুভব করেন। এভাবে দিন চলে যায়, রাত চলে যায়। মাস ঘুরে নতুন মাস আসে। নাজিয়া দূরত্ব বজায় রাখে আর হাবিব সেই দূরত্ব দূর করার চেষ্টা করেন। অবশেষে, তাদের প্রথম বিবাহবার্ষিকী উপস্থিত হয়। হাবিব সারাদিন অফিসে করে সন্ধায় বাসায় ফেরার উদ্দেশ্যে রওনা করেন। আজ তিনি বিশাল এক সারপ্রাইজ নিয়ে যাচ্ছেন। মনে হয় আজ নাজিয়াকে তিনি খুশি করতে পারবেন। নাজিয়াকে তিনি প্যারিস নিয়ে যাবেন। প্যারিস নাজিয়ার প্রিয় একটা জায়গা। বহুদিন ধরে তিনি চেষ্টা করছিলেন পারিসে যাওয়ার বন্দোবস্ত করার। আজ নাজিয়া অনেক খুশি হবে।

বাসায় ফিরে এসে দেখেন নাজিয়া নেই। তিনি কল করলেন। ফোন বন্ধ। তারপর যখন বিছানায় বসলেন, বিছানার পাশে টেবিলে রাখা একটি খাম দেখলেন। খামে একটা চিঠি ছিল। চিঠির সাথে তাদের ডিভোর্স পেপার। হাবিবের মুখ রক্তশূন্য হয়ে গেলো। কাঁপা কাঁপা হাতে চিঠি খুললেন। সময় নিয়ে চিঠিটা পড়লেন। পড়া শেষে তিনি কাঁদতে লাগলেন। হাউমাউ করে কাঁদা না। নিরবে কাঁদা। তার কাছে মনে হলো তিনি এই পৃথিবীতে নেই। অন্য পৃথিবীতে। অন্য কোনো ভুবনে। যে ভুবনে তিনি ছাড়া আর কেউ নেই।

হাবিবুর রহমানকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। তিনি হাটতে পারেন না। কথা বলেন না। কেউ এসে তার সাথে কথা বললে, তিনি তার দিকে অপলক তাকিয়ে থাকেন। ভাগ্য ভালো তার বাবা মা কেউ নেই। মামার কাছে বড় হয়েছেন। বাবা মা বেঁচে থাকলে ছেলের এই অবস্থা সইতে পারতেন না। প্রতিদিন পরিচিত অনেক মানুষ তার সাথে এসে দেখা করে। তিনি কারোর সাথে কথা বলেন না। হাঁসেন না। কাঁদেন না। শুধু অপলক তাকিয়ে থাকেন।


*** নাজিয়া তার চিঠিতে যা লিখেছিলো তার মূল বিষয়বস্তু হচ্ছে যে সে অন্য আরেকটি ছেলেকে ভালোবাসে। তাকে সে বিয়ে করতে চায়। কিন্তু বাসা থেকে মেনে না নিয়ে এক প্রকার জোড় করে তাকে বিয়ে দিয়ে দেয়। সমস্ত কিছুর জন্য নাজিয়া অত্যন্ত দুঃখিত এবং হাবিবের কাছে ক্ষমাপ্রার্থী।

Comments

Popular posts from this blog

Kabhi Haan Kabhi Naa

চিঠি

Awe! (2018)