আমি সে এবং আত্মহত্যা

আমি বসে আছি রেলষ্টেশনের একটি বেঞ্চে। ষ্টেশনে লোকজন কম। ভর দুপুরের রোদ কেটে গেছে। বিকালটা অনেক সুন্দর। তারপরেও কেন জানি একটা ক্লান্তি লাগছে মনে। হটাৎ একটা মেয়ে এসে বেঞ্চের ওপর প্রান্তে বসলো। দেখতে রূপবতী। নীল শাড়ি পড়া। চোখে কাজল। উদাস মনে বসে রেললাইনের দিকে তাকিয়ে আছে। তবে যে কোনো কারনেই হোক, মেয়েটির দিকে তাকিয়ে থাকতে অনেক ভালো লাগছে। চোখ দুইটা খুব দেখতে ইচ্ছা করছে। যাদের হার্টে সমস্যা আছে তাদের এই ধরনের রূপবতী মেয়েদের চোখের দিকে তাকানো উচিত না। হার্টফেল করার সম্ভবনা থাকে অনেকখানি। মেয়েটির দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে বললাম, “আত্মহত্যা করতে এসেছেন?” মেয়েটি ভ্রু কুচকে আমার দিকে তাকালো। যথেষ্ট অবাক হয়েছে বোঝা যাচ্ছে। মেয়েটি বলল, “জ্বি? কি বললেন?”

আমি হাঁসি হাঁসি মুখ করে বললাম, “বলছি, আত্মহত্যা করতে এসেছেন?”

“কি সব আজগুবি কথা বলছেন? আমি আত্মহত্যা করতে যাবো কেন?”

“দেখে তো তাই মনে হচ্ছে। যে ভাবে রেললাইনের দিকে তাকিয়ে আছেন। মনে হচ্ছে রেল লাইনের সাথে ডিল করছেন যে আপনি তার উপর ঝাঁপিয়ে পরবেন আর সে আপনাকে খুশি খুশি মনে জড়িয়ে ধরবে। সত্যি বলছি, ঘটনা সত্যি হলে বেচারা রেললাইন কিন্তু হেব্বি লাকি হবে। হুম।”

“আপনি পাগল নাকি বলুন তো? ফালতু!” বলেই মেয়েটি রাজ্যের বিরক্ত নিয়ে মুখ ঘুরিয়ে নিলো।

আমি হো হো হো করে হেসে উঠলাম। মেয়েটি বলল, “হাসলেন কেন? এখানে হাসির কি হলো?”

বললাম, “এমনিতেই, পাগল হবার ব্যার্থ প্রচেষ্টা করলাম বলতে পারেন। যাই হোক, ট্রেন আসার তো অনেক দেরি। এখনো ভাবুন, আত্মহত্যা করবেন কিনা। এত সুন্দর একটা জীবন শুধু শুধু কিছু হতাশার কারনে নষ্ট করবেন? এটা কি ঠিক হবে? আপনার বাসায় বাবা আছে, মা আছে। মূলকথা একটা পরিবার আছে।”

“আপনি শুধু শুধু ফালতু সব কথা বলছেন। আমার ব্যাক্তিগত বিষয় নিয়ে কেউ কোনো কথা বলুক আমি তা পছন্দ করি না।”

“এই দেখুন। কিছুক্ষণ পর মরে ভুত হয়ে যাবেন। অথচ এখনো আপনার ব্যাক্তিত্ব প্রবল।”

“উফফ। আপনি কি বলতে চান সরাসরি বলুন। নাহলে চুপ করে থাকুন। মন মেজাজ ভালো নেই।”

মেয়েটি যে কোনো কারনেই হোক বেঞ্চ চেঞ্জ করছে না। চাইলেই সে এটা করতে পারে। আমি বললাম, “দেখুন, ছেলেটি যদি আপনাকে ধোঁকা দিয়ে থাকে তাহলে সে হলো পৃথিবীর সবথেকে নিন্ম শ্রেণীর প্রাণী। তার জন্য আত্মহত্যা করাটা হবে সব থেকে বড় বোকামি। এমনকি আপনি চাইলে সবথেকে বড় বোকামি করার জন্য গিনেস বুকে নাম লেখাতে পারেন। আর আপনি রূপবতী না হয়ে যদি কুৎসিত হতেন তাহলে বলতাম চির কুমারী থাকতে। মানব সেবায় নিজেকে নিয়জিত করতে। এই ষ্টেশনেই কিছু বাচ্চা আছে। ওদের অনেক কষ্ট। ওদের কষ্ট দূর করা দিয়ে আপনার যাত্রা শুরু করতেন। এক সময় আপনার নাম সমস্ত পৃথিবীতে ছড়িয়ে পড়তো। আমি একটা টাইম ম্যাগাজিন হাতে নিয়ে আপনার লেখা পড়তাম।”

“জীবনটা এত সহজ?”

“ওয়েল, জীবনটা অবশ্যই সহজ। কঠিন হলো পরিকল্পনা করা, সঠিক সিদ্ধান্ত নেওয়া। এইযে আপনি নিজেকে দেখুন। সিদ্ধান্তে পৌছাতে পারছেন না। একবার ঠিকঠাক সিদ্ধান্ত নিতে পারলেই ব্যাস, জীবনটা অনেক সহজ।”

মেয়েটি খানিকক্ষণ আমার দিকে বিরক্ত নিয়ে থাকলো। তারপর বলল, “আপনি যে একটা অসম্ভব বিরক্তকর প্রাণী সেটা কি জানেন?”

আমি হেসে দিয়ে বললাম, “হ্যাঁ জানি। এবং আমি এখন এটাও জানি, আপনি শেষ মুহূর্তে আত্মহত্যা করবেন না।”

মেয়েটি এবার প্রচণ্ড রাগিরাগি চোখে আমার দিকে তাকিয়ে কিছু না বলেই উঠে পড়লো। গটগট করে হেঁটে চলে যেতে লাগলো। এবং মুহূর্তের মধ্যে হাওয়া হয়ে গেলো। আমি ওখানে বসেই রইলাম ট্রেনের জন্য। দেখি কি হয়।

ট্রেন চলে এসেছে। আমি এদিক ওদিক তাকাচ্ছি। মেয়েটা ফিরে এসেছে। সে রেললাইনের পাশেই আনমনে দাড়িয়ে আছে। আমি তার দিকে তাকিয়ে আছি। সে আমাকে দেখছে না। ট্রেন ছেঁড়ে দিয়েছে। আমি চোখ বন্ধ করলাম। আর মনে মনে বললাম, মেয়েটি রেললাইনের পাশ থেকে সরে দাঁড়াবে। চোখ খুলে দেখি মেয়েটি নেই। ট্রেন চলে গেছে। কেউ মারা যায়নি। মারা গেলে হৈচৈ হতো। আমি ঠোঁটের কোণে একটা হাঁসি দিয়ে উঠে দাঁড়ালাম।

Comments

Popular posts from this blog

Kabhi Haan Kabhi Naa

চিঠি

Awe! (2018)