হুমায়ূন আহমেদ এবং আমি

মাঝ রাত। আমার ঘুম ভেঙ্গে গেলো। প্রায় রাতে এই সময়ে আমার ঘুম ভেঙ্গে যায়। আমার বিছানার পাশেই জানালা। আমি তাকিয়ে দেখি, একজন ভদ্রলোক জানালার সামনে চেয়ারে বসে আছেন। তিনি জানালার বাইরে আকাশের দিকে তাকিয়ে আছেন। খুব সম্ভব জ্যোৎস্না দেখছেন। আমার দিকে তাকিয়ে বললেন, “দুঃখিত, আপনার ঘুম ভাঙ্গিয়ে দিলাম।” আমি মুখটা হাঁসি হাঁসি করে বললাম, “ব্যাপার না। কিন্তু, আপনি কে বলুন তো?” তিনি আমার দিকে তাকিয়ে খুব স্বাভাবিক ভাবেই বললেন, “আমি হুমায়ূন আহমেদ।” আমি একটুখানি বিস্মিতবোধ করলাম। তারপর এক গাল হাঁসি দিয়ে বললাম, “ও স্যার আপনি? তাইতো বলি এত চেনা চেনা লাগে কেন? আসসালামুয়ালাইকুম, স্যার কেমন আছেন?” স্যার বললেন, “জ্বি, ভালো আছি।”

তো স্যার, হটাৎ আপনি এখানে?

জ্যোৎস্না দেখতে এলাম। অনেকদিন জ্যোৎস্না দেখি না। মনটা কেমন জানি করছিলো।

খুব ভালো করেছেন, স্যার। কি খাবেন বলেন?

কিছু খাবোনা। আমাকে বিরক্ত করবেন না, জ্যোৎস্না দেখতে দিন।

জ্বি স্যার। অবশ্যই স্যার, অবশ্যই। স্যার, মিসির আলি স্যার আর হিমু ভাইজান কেমন আছেন?

স্যার একটু বিরক্ত হয়ে আমার দিকে তাকিয়ে যথাসম্ভব ঠাণ্ডা গলায় বলল, মিসির আলির মাথা নষ্ট হয়ে গেছে, সারাদিন একটা বই সামনে নিয়ে বসে থাকে কিন্তু বইটা সে উল্টো করে ধরে রাখে। উল্টো করে বই পড়ার চেষ্টা করে বলে মনে হয়। আর হিমুর খবর জানিনা। ও ডুব দিয়েছে।

তারপর স্যার বললেন, রবিদা কি আসে?

না স্যার, উনারে তো দেখিনা। আসেন না বোধ হয়। তবে স্যার একটা খারাপ সংবাদ আছে।
কি সংবাদ?

ভক্ত’রা আপনার লেখা না পেয়ে পাগল হয়ে গেছে বলতে পারেন। অন্যের লেখা আপনার নামে চালায় দিচ্ছে।

কি বলেন এসব? কার লেখা আমার নামে চালাচ্ছে?

কাসাফাদ্দোউজা নোমান নামের এক ছেলের দুই লাইনের লেখা অন্য পাঠক আপনার নামে চালিয়ে দিয়েছে। বেচারা নোমান লজ্জায় জর্জরিত হয়ে খুবই কষ্ট পেয়েছে।

হুম। আমার জন্য তাঁর একটা লেখা নষ্ট হয়ে গেলো। একজন লেখকের লেখা তাঁর কাছে কতটা মূল্যবান সেটা কেউ বুঝলো না।

স্যার এক কাজ করেন, নোমান ভাইয়ের সাথে গিয়ে দেখা করে আসেন। তিনিও আপনার মত জ্যোৎস্নাপ্রেমী।

স্যার হটাৎ প্রসঙ্গ পাল্টে বললেন, আজকের জ্যোৎস্না অনেক অপূর্ব। অসম্ভব মায়ায় জড়ানো। চাদের নিজের কোনো আলো নেই। আমরা প্রতিফলিত জিনিস দেখতে পছন্দ করি। সূর্যের আলো চাদে প্রতিফলিত হয়। আমরা রাতে সেই আলো দেখে মুগ্ধ হয়ে বলি কি সুন্দর জ্যোৎস্না রাত।

স্যার, পুরনো কথা কেন বলছেন? নতুন কিছু বলেন শুনি।

আমি মৃত। আমার দ্বারা নতুন কিছু বলা সম্ভব নয়। আমি আপনার মস্তিষ্কের কল্পনা। শুনুন, আপনি অনেক বিরক্ত করেন। আপনার বাসায় এসে আর জ্যোৎস্না দেখবো না। আমি চলি।

স্যার চলে যাবেন? স্যার, দুই মিনিট বসেন। একটা গান শুনে যান।

“ও কারিগর দয়ার সাগর, ওগো দয়াময়
চান্নি পসর রাইতে যেন আমার মরন হয়।”

আমার হটাৎ চোখ ভিজে এলো। তাকিয়ে দেখি ঘরে কেউ নেই। যা ছিল তা হলো বিভ্রম। আমি দরজা পেড়িয়ে বাইরে গেলাম। দরজা খোলা রেখে রাস্তায় নেমে পরলাম। বাকি রাত জ্যোৎস্নার আলোয় হাঁটবো। জ্যোৎস্নার আলোয় সিক্ত হবো, স্নান করবো।

Comments

Popular posts from this blog

Kabhi Haan Kabhi Naa

চিঠি

Awe! (2018)