Skip to main content

আব্দুল গনি

আব্দুল গনির হাত পা বাঁধা। তাকে রাখা হয়েছে উঠানের এক কোণায়। সিদ্দিকুর রহমান গ্রামের চেয়ারম্যান। খুবই ভয়ঙ্কর মানুষ। রেগে গেলে তিনি কি করেন নিজেই হিসাব রাখতে পারেন না। আজ তিনি দুইজনের উপর ভয়ঙ্কর ভাবেই রেগেছেন। একজনকে উঠানের মাঝখানে বস্তার মধ্যে ভরে মারা হচ্ছে। এরপর আব্দুল গনি সিরিয়ালে আছেন। আব্দুল গনিকে চেয়ারম্যানের লোকজন তার বাড়ি থেকে মারতে মারতে এখানে নিয়ে এসেছেন। এখন তিনি কি করবেন কিছুই বুঝতে পারছেন না। ভয়ে তার কলিজা শুখায় গেছে। দৌড় দিয়ে পালাবেন, সেই উপায় নেই। চেয়ারম্যান সিদ্দিকুর রহমান হুংকার দিলেন, “ওই, ওরে নিয়ে আয়।” কয়েকজন গিয়ে আব্দুল গনিকে এনে চেয়ারম্যানের সামনে রাখলো। চেয়ারম্যান সাহেব আব্দুল গনির দিকে তাকিয়ে বললেন, “তোর নাম যেন কি?”

আব্দুল গনি কাঁপা কাঁপা গলায় বলল, “জ্বি। আব্দুল গনি”
“তোর মার কাছে আমি কত টাকা পাই?”
“জ্বি। পাচ হাজার টাকা।”
“তোর মা কই?”
“জ্বি। তিনি মারা গেছেন।”
“মাগী আমার টাকা না দিয়ে মরলো ক্যান?”

আব্দুল গনি হতভম্ব হয়ে তাকিয়ে আছেন। কি বলবেন কিছুই বুঝতে পারছেন না। চেয়ারম্যান সাহেব আবার বললেন, “তুই আমার টাকা দুই দিনের মধ্যে দিতে পারবি?” আব্দুল গনি তখনো হতভম্ব হয়ে তাকিয়ে আছেন। দুইদিনের মধ্যে পাচ হাজার টাকা তার পক্ষে দেওয়া কোনোভাবেই সম্ভব নয়।

“ওই, তোরা এরে নিয়ে যা। বস্তার মধ্যে ভরে পিটাবি। বস্তা যতক্ষণ পর্যন্ত না লাল হয় ততক্ষণ।” বলেই তিনি ভিতর ঘরে চলে গেলেন।

আব্দুল গনি ততক্ষণে চিৎকার করে কান্নাকাটি শুরু করছেন। “আমারে মাইরেন না, আমারে মাইরেন না। আমি কিছু করিনাই। আল্লাহর দোহাই লাগে আমারে মাইরেন না।” ষণ্ডা মার্কা একজন লোক কুৎসিত ভাবে হাঁসতে হাঁসতে আব্দুল গনিকে পাজকোলা করে বস্তায় ভরলো। তারপর কয়েকজন মিলে বাঁশ দিয়ে তাকে মারতে লাগলো আর বস্তার ভিতর দিয়ে আব্দুল গনির আর্তনাদ ভেসে আসতে লাগলো। বাড়ির ভিতর দিয়ে চেয়ারম্যান সাহেব আবার হুংকার দিলেন, “ওই, ওরে তালা বন্ধ করে রাখ। বাকি বিবেচনা সন্ধায় করবো।”

আব্দুল গনিকে একটা জানালাবিহীন ঘরের মধ্যে চেয়ারের সাথে হাত পা বেঁধে তালা বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। ঘর সম্পূর্ণ অন্ধকার। এই অন্ধকার ঘরে আব্দুল গনি নির্বিকার ভঙ্গিতে মাটির দিকে তাকিয়ে রয়েছেন। সমস্ত শরীর রক্তাক্ত। চোখ বেয়ে পানি পড়ছে। কিছুক্ষণ যেতে না যেতেই তিনি বিড়বিড় করা শুরু করলেন। বিড়বিড় করে কি বললেন কিছুই বোঝা গেলো না। এর মধ্যে শুধু দুপুরে একজন এসে পানি খাওয়ায় দিয়ে গেছে, আর কেউ আসেনি।

সন্ধার সময় চেয়ারম্যান সিদ্দিকুর রহমানের হুকুমে একজন লোক আব্দুল গনিকে আনতে গেলো। লোকটি তালা খুলে হারিকেন নিয়ে ঘরে ঢুকেই দেখলো, ঘরে কেউ নেই। ঘর সম্পূর্ণ ফাঁকা। তবে চেয়ারের উপর আব্দুল গনির রক্তমাখা শার্টটা আছে আর সমস্ত ঘর একটা পোড়া গন্ধে ম ম করছে।

Comments

Popular posts from this blog

রহস্যময় ভালবাসা

ভুমিকা ভুমিকা সাধারনত উপন্যাসের হয় কিংবা রচনা জাতীয় কোনো লেখায় হয়। একটা গল্পের জন্য ভুমিকা লেখা হাস্যকর। তবুও লিখলাম। এই গল্পের সাথে বাস্তবের কোনো মিল নেই। এটা শুধুই কল্পনা দিয়ে লেখা। তবে নাম গুলোর অস্থিত্ত্ব আছে। ভুতের গল্প লিখতে চেয়েছিলাম। যে গল্প মাথায় ছিল সেটা তেমন ভয়ঙ্কর বলে আমার মনে হলো না। কিংবা আমি হয়ত ভয়ঙ্কর কিছু লিখতে পারতাম না। তাই লিখলাম না। আশা করি এই গল্পটা পড়ে খুব বেশি বিরক্ত হবেন না। যদি আপনার ভালো লাগে তাহলে ধন্যবাদ। ভালো না লাগলেও ধন্যবাদ।  ইশতিয়াক আহমেদ চৌধুরী টুটপাড়া ঘোষের ভিটা, খুলনা ২০.০৯.২০১২  উৎসর্গ  একটা মানুষকে কি দুইবার উৎসর্গ করা যায়? এইটা সেই মানুষটার জন্য, যার কাছেই শুধুমাত্র আমি একজন লেখক। যার কাছে আমার ভালো কাজেরও মূল্য আছে, খারাপ কাজেরও মূল্য আছে। আমার অদ্ভুত আচরণে সে বিরক্ত হয়, আসলে সে মুগ্ধ হয় বলে আমার বিশ্বাস।  মানুষটা আমাকে অনেক ভালোবাসে, এত কেন ভালোবাসে, কিভাবে ভালোবাসে, আমি কিছুই জানিনা। আমার প্রিয় হলুদিয়া পাখি একটা মেয়ে কতটা সুন্দর হলে একটা ছেলে মেয়েটার দিকে মন্ত্রমুগ্ধ হয়ে তাকিয়ে থাকে? একটা মেয়ে ঠিক কতটা সুন্দর হলে

Veer Zaara

  Spoiler Alert শুরুতেই ইয়াশ চোপড়ার ম্যাজিকাল কণ্ঠে কবিতা। কবিতা শেষ হওয়া মুহুর্তেই সনু নিগম আর লতা গেয়ে ওঠে আমার প্রিয় সব থেকে ম্যাজিকাল গানটা, “কিউ হাওয়া আজ ইউ গা রা হি হে”। সনুর কণ্ঠের সাথে কণ্ঠ মিলিয়ে স্ক্রিনে চলে আসে আমার প্রিয় সুপারস্টার শাহরুখ খান। সাদা জামা পড়ে সাদা নৌকায় ভেসে প্রকৃতির সাথে মিশে যাওয়ার দৃশ্য আমাকে আজও অনুপ্রেরণা দেয় প্রকৃতির সাথে এভাবে একাত্বতা ঘোষনা করার। মুভির শুরুতেই এই গান মনের মধ্যে একটা প্রশান্তি দেয়। মুভি দেখার আগ্রহ কয়েকগুন বাড়িয়ে দেয়।   এই গান শেষ হওয়া মুহুর্তেই দেখা যায়, বৃদ্ধ বীর প্রতাপ সিং স্বপ্নে জারা হায়াত খানকে গুলি খেতে দেখে ধরফর করে ঘুম ভেঙ্গে উঠে বসে। শাহরুখ খানের এই বৃদ্ধ চরিত্র তার ক্যারিয়ারে উজ্জ্বল নক্ষত্র হয়ে থাকবে আজীবন। ২২ বছর ধরে বীর প্রতাপ সিং নিজেকে জেলে বন্দী করে রেখেছে। এই ২২ বছরে কারো সাথে একটা কথা পর্যন্ত বলেনি। শুধুমাত্র জারার সন্মান রক্ষার্থে। কেউ তার গল্প জানেনা। হঠাৎ একদিন সামিয়া সিদ্দিকি নামের একজন হিউমান রাইটস লয়ার এগিয়ে এলো এই বীর প্রতাপ সিং এর গল্প জানার জন্য। ২২ বছর ধরে যেই মানুষটাকে সবাই কয়েদী নম্বর ৭৮৬ ব

Anveshanam (2020)

No Spoiler মুভির নাম Anveshanam , এটি একটি মালায়ালাম মুভি। মুভিতে একটা দৃশ্য দেখে বহু বছর পরে বুক কেঁপে উঠেছিলো। অত্যন্ত চমৎকার একটা মুভি। সিরিয়াল কিলার রিলেটেড থ্রিলার মুভি দেখতে দেখতে বিরক্ত ধরে গেলে চট করে এই হাসপাতাল পরিবেশে বানানো থ্রিলার মুভিটি দেখে ফেলুন। থ্রিলার মুভির নানান ধরণ আছে। আমার কাছে এই ধরণের থ্রিলার বেশি ভালো লাগে। সব থেকে বেশি ভালো লেগেছে এর ব্যাকগ্রাউন্ড মিউজিক। দূর্দান্ত লেগেছে। প্লট অনুযায়ী পারফেক্ট মিউজিক।   আমি প্রথমে ট্রেইলার দেখেছিলাম। ট্রেইলার অর্ধেক দেখেই আমার আগ্রহ জাগে এবং সাথে সাথে ডাউনলোড দিয়ে দেখতে বসে গেছি। আপনারা চাইলে ট্রেইলারটা দেখে আসতে পারেন। আগ্রহ জাগানোর জন্য প্লট সম্পর্কে একটু বলি। হাসপাতালে একটা বাচ্চা ভর্তি হয়েছে। বলা হচ্ছে বাচ্চাটা এক্সিডেন্ট করেছে। পুলিশ এসে ইনভেস্টিগেশন শুরু করলে দেখা যায় বাচ্চার বাবা মা থেকে শুরু করে প্রত্যেকে প্রত্যেকের জায়গা থেকে মিথ্যা কথা বলছে। কিছু একটা লুকাচ্ছে। কি লুকাচ্ছে? সেটাই রহস্য। এই রহস্যে জানতেই মুভিটা দেখতে হবে।   এই মুভির কোনো রিভিউ আমার চোখে পড়েনি। কিন্তু এই মুভি নিয়ে যথেষ্ট আলোচনা করা উচি