অলস সম্পর্ক
উৎসর্গঃ
আলমগীর রুমান
পাগল পরিচালক। শুদ্ধতম মানুষ বলে একটা কথা আছে। সে শুদ্ধতম মানুষ কিনা জানিনা। কিন্তু শুদ্ধতম ভালোবাসা তার মাঝে আমি দেখেছি। শুদ্ধতম ভালোবাসায় সে অনেক উপরে যাবে এবং নিচে দাড়িয়ে আমি তাকে দেখবো, সেই প্রার্থনা করি।
এসব কি?
- সারপ্রাইজ। গিফট।
ফাজলামি পাইছো?
- ফাজলামি হবে কেন? তোমাকে গিফট দিতে পারি না?
না পারো না। আমি তোমার কি লাগি?
- দেখো, আমি তোমার কি হই না হই, সেটা জানিনা। তোমাকে গিফট দিতে ইচ্ছে হলো। দিলাম। বাকিটা তোমার ব্যাপার।
বলেই সায়েম মালিহার বাসা থেকে বের হয়ে এলো। বাইরে বেশ ঠাণ্ডা পড়েছে। পাঞ্জাবিতে শীত মানাচ্ছে না। ইস যদি কুয়াশা পড়তো। লাভ তেমন কিছুই হতো না। মালিহা তো আর পাশে থাকতো না। ভুলটা তারই। ভালোবাসি বলে দূরত্ব বজায় রেখে এদিক ওদিক দৌড়ে বেড়িয়েছে। তাহলে কি আর ভালোবাসা হবে? এই দীর্ঘ সময়ে তার সাথে তিন চার বারের বেশি হাতে হাত রেখে হাঁটা হয়েছে বলে মনে হয়না। কেন মেয়েটা তারে ভালবাসবে? ভালোবাসা পাওয়ার মত তো সে কিছুই করেনি। তবুও তো অনেক দিয়েছে। সায়েম তার ভুল বুঝতে পেরেছে। সে আর একটাবার সুযোগ চায়। তাকে ভালোবাসার। দেখিয়ে দিতে চায়, সে আসলে কতটা ভালবাসে মালিহাকে। সে সম্ভবনা হয়ত আর নেই। তবুও।
এই পাগলা, তোমার চুল উস্কোখুস্কো ক্যান?
- কেটে ফেলবো?
না থাক। সুইট লাগে। পাগলা, তুমি খোঁচা খোঁচা দাঁড়ি রাখছ ক্যান?
- শেভ করবো?
না থাক। হিরো হিরো লাগে। আচ্ছা, তোমার পাঞ্জাবী নেই?
- হ্যাঁ আছে। কেন?
পড়বা। ভালো লাগবে। আচ্ছা থাক, পড়া লাগবে না। এমনি বলছি। আমি যা বলবো, তোমাকে তাই করতে হবে নাকি?
- হাহা। না সমস্যা নেই। আমার পাঞ্জাবী ভালো লাগে।
জানি। আমি বলছি বলেই এমন।
- আরে না। আমি আসলেই পাঞ্জাবী পছন্দ করি। আজ পড়া হয়নি।
আচ্ছা, চলো চুমু খাই।
- হাহাহা। কি বলো এসব আবোলতাবোল?
আবোলতাবোল না। সত্যি সত্যি।
এইতো সেদিন, এভাবেই শুরু হয়েছিল সম্পর্কটা। এখন আর কেন জানি ভালো লাগে না। ভাবতে ভাবতে মালিহা চায়ের কাঁপ হাতে নিয়ে বারান্দায় এসে বসলো। সামনে ছোট টেবিলটাতে সায়েমের দেওয়া গিফট। কি আছে তাতে? আন্দাজ করা যাচ্ছে না। এসব সে আগে কখনো করেনি। অদ্ভুত রকম মানুষটা। ভালোবাসি বলতে বলতে দূরে চলে গেলো। দূর থেকে দাড়িয়েই অভ্যাসমত ভালোবাসি বলেই গেলো। কাছে আর এলো না। সে হয়ত নিজেও জানেনা। ভালোবাসি বলাটা তার অভ্যাস হয়ে গেছে।
আর ফিরে যাওয়া যাবে না। নাকি ফিরে যাবো? আবার যদি দূরে ঠেলে দেয়। কষ্ট দেয়। খুব গোপনে ভারী নিশ্বাস ফেললো মালিহা। শহর ভরা চাদের আলো। স্নিগ্ধ ঠাণ্ডা বাতাসে চুল গুলো উড়িয়ে নিয়ে গেলো। টেবিলে চায়ের কাঁপ রেখে মালিহা সিগারেট ধরালো। নিকোটিনের অভাব ছিল। এই নিকোটিনটা না থাকলে হয়ত অপেক্ষা করা যেত না। গিফট বক্স খোলার অপেক্ষা কিংবা সায়েমের কল আসলে, কর রিসিভ করে তার কণ্ঠ শোনার অপেক্ষা।
বারো বছরের একটা ছেলে এসে বলল, "ভাই, সিগারেট হবে একটা?" সায়েম তাকিয়ে দেখল, তার মতই উস্কোখুস্কো চুলের একটা ছেলে। গায়ে ছেড়া পাতলা সোয়েটার। সায়েম বলল, "হ্যাঁ আছে। বয়।" সায়েম সিগারেট ধরিয়ে দুই টান দিয়ে সিগারেটটা ছেলেটাকে দিল। ছেলেটা আয়েশ করে সিগারেট টানছে। অদ্ভুত হলেও ভালো লাগছে দেখতে। চাদের আলোয় সব কিছুই ভালো লাগে।
সায়েম মোবাইলটা বের করেছে মালিহাকে কল করে শোনার জন্য যে সে গিফটটা খুলেছে কিনা। চাদের আলোর কাছে মোবাইলের আলো হেরে গেলো। মোবাইলটা বন্ধ করে সে পকেটে রাখল। থাক না। ভালোবাসা আড়ালেই থাক। এখন এত আদিখ্যেতার দরকার নেই। দরকার নেই দেখানো ভালোবাসার। সম্পর্কটা আড়ালে থাকুক। অভিমানে থাকুক।
Comments
Post a Comment