Skip to main content

বাবা

সেসব কন্যাদের জন্য যারা তাদের প্রিয় বাবকে হারিয়েছে। বাবার ভালোবাসা অন্য জিনিস। মাপা যায় না। বর্ননা করা যায় না। অনুভব করতে হয়। পৃথিবীতে অনেক খারাপ মানুষ আছে তবে একজন খারাপ বাবা নেই।

সাফায়েত সাহেব তার মেয়েকে নিয়ে পুকুর পাড়ে বসে হো হো করে হাসছেন। তার মেয়ে পুতুল। দেখতেও পুতুলের মত। সবে চতুর্থ শ্রেণিতে ভর্তি হয়েছে। বিরাট চঞ্চল। সারাদিন হৈ চৈ করে বেড়ায়। পুকুর ভালোবাসে। এই কিছুক্ষণ আগে পুতুলের মা আয়েশা পুতুলকে পুকুরে নামার জন্য বকা দিয়েছেন। এই নিয়ে নাকি আজ সে পাঁচবার পুকুরে নেমেছে। বাবা কিছু বলেননা। অনেক বেশি ভালোবাসেন পুতুলকে। পুতুল আনন্দ করে আর বাবা মুগ্ধ হয়ে দেখেন। মাঝে মাঝে যখন তার মা এই নিয়ে বকা ঝকা করেন তখন তিনি হো হো করে হাসেন। পেটে আগুন্তক নিয়ে পুতুলের মা খুব দুশ্চিন্তায় থাকেন মেয়েকে নিয়ে। কিন্তু কে শোণে কার কথা? 

পুকুর পাড়ে বসে সাফায়েত সাহেব তার মেয়েকে বললেন, “তোকে না কতবার বারণ করেছি যখন তখন পুকুরে না নামতে, নামিস কেন?”

পুতুল বলল, “বাবা, পুকুর ভালো লাগে, পুকুরের পানিতে লাফাতে আরও বেশি ভালো লাগে। আমি কি করবো?”
সাফায়েত সাহেব হেসে দিয়ে বললেন, “ঠাণ্ডা বাধাবি তো।”

পুতুল অভিমানের স্বরে বলল, “লাগুক”। তারপর বলল, আচ্ছা বাবা, “ভাইটার নাম কি রাখবা?”
“কি রাখা যায় বলত?”
“জানিনা, তুমি বলো।”
“আমি ভাবছি পরশ রাখবো। কেমন হবে?”
“পরশ? মানে কি?”
“স্পর্শ। ছোঁয়া। এই যে আমি তোকে ছুঁয়ে আদর করছি। এর নাম পরশ।”
“তুমি পরশকে বেশি আদর করবা নাকি আমাকে?”
“পরশকে। জানিস, পরশ অনেক বড় হবে। অনেক মহৎ একজন মানুষ হবে।”

পুতুল কিছুটা অভিমান, কিছুটা ভালোবাসা, কিছুটা শ্রদ্ধা নিয়ে তার বাবাকে জড়িয়ে ধরল। তখন সন্ধ্যা নেমেছে। বাবা মেয়ে মিলে সন্ধ্যা নামা দেখছে। একদিন তাদের দলে যোগ দিবে পরশ। তখন তিনজনে মিলে গুনগুন করে গান গাবে আর সন্ধ্যা হওয়া দেখবে।

পরশ এলো। কিন্তু সে তার বাবাকে দেখতে পেল না। কোনোদিন দেখতেও পারবেনা। জানতে পারবে না তার বোন পুতুল আর তার বাবা মিলে কত মজাই না করত। পরশ বড় হলো কাঁদতে কাঁদতে। কিন্তু সে কাঁদা তার বাবাকে না পাওয়ার কাঁদা না। অন্য কিছুর জন্য কাঁদা। যা ব্যাখ্যা করা সম্ভব না। পরশ একদিন পুতুলকে জিজ্ঞাসা করলো, “আপু, বাবা কেমন ছিল রে?” হটাৎ এমন প্রশ্ন শুনে পুতুল চমকে গিয়ে নিজেকে সামলে নিল। বলল, “বাবা ছিল শুভ্রর মত মানুষ। তার মনে এতটুকু কালো দাগ ছিলনা। আজ সে থাকলে তোকে অনেক আদর করত।” বলেই তার মনে হল, কথা গুলো বলা ঠিক হয়নি। ভুল হয়েছে। না, বরং অন্যায় হয়েছে।

পুতুল বসে আছে ঠিক সেই পুকুর ঘাটে। আজ তার বাবার মৃত্যুবার্ষিকী। কেন জানি মাঝে মাঝে তার বাবার কাছে যেতে ইচ্ছা করে। যখনি তার এমন মনে হয়, তখনি কে যেন তার কানের কাছে ফিসফিস করে বলে, “আমি আছিরে, তোর অনেক কাছে, খুব কাছে।” পুতুলের চোখে পানি আসে। কষ্টের না, আনন্দেরও না। অভিমানের। মানুষটা চলে গেছে, রেখে গেছে এতোগুলো অভিমান। আর সে অভিমান গুলোকে লালন পালন করে বড় করছে। অভিমানগুলো ভারী হচ্ছে। কখনো ঝড়ে পড়ছে, আবার ভারী হচ্ছে।

Comments

Popular posts from this blog

রহস্যময় ভালবাসা

ভুমিকা ভুমিকা সাধারনত উপন্যাসের হয় কিংবা রচনা জাতীয় কোনো লেখায় হয়। একটা গল্পের জন্য ভুমিকা লেখা হাস্যকর। তবুও লিখলাম। এই গল্পের সাথে বাস্তবের কোনো মিল নেই। এটা শুধুই কল্পনা দিয়ে লেখা। তবে নাম গুলোর অস্থিত্ত্ব আছে। ভুতের গল্প লিখতে চেয়েছিলাম। যে গল্প মাথায় ছিল সেটা তেমন ভয়ঙ্কর বলে আমার মনে হলো না। কিংবা আমি হয়ত ভয়ঙ্কর কিছু লিখতে পারতাম না। তাই লিখলাম না। আশা করি এই গল্পটা পড়ে খুব বেশি বিরক্ত হবেন না। যদি আপনার ভালো লাগে তাহলে ধন্যবাদ। ভালো না লাগলেও ধন্যবাদ।  ইশতিয়াক আহমেদ চৌধুরী টুটপাড়া ঘোষের ভিটা, খুলনা ২০.০৯.২০১২  উৎসর্গ  একটা মানুষকে কি দুইবার উৎসর্গ করা যায়? এইটা সেই মানুষটার জন্য, যার কাছেই শুধুমাত্র আমি একজন লেখক। যার কাছে আমার ভালো কাজেরও মূল্য আছে, খারাপ কাজেরও মূল্য আছে। আমার অদ্ভুত আচরণে সে বিরক্ত হয়, আসলে সে মুগ্ধ হয় বলে আমার বিশ্বাস।  মানুষটা আমাকে অনেক ভালোবাসে, এত কেন ভালোবাসে, কিভাবে ভালোবাসে, আমি কিছুই জানিনা। আমার প্রিয় হলুদিয়া পাখি একটা মেয়ে কতটা সুন্দর হলে একটা ছেলে মেয়েটার দিকে মন্ত্রমুগ্ধ হয়ে তাকিয়ে থাকে? একটা মেয়ে ঠিক কতটা সুন্দর হলে

Veer Zaara

  Spoiler Alert শুরুতেই ইয়াশ চোপড়ার ম্যাজিকাল কণ্ঠে কবিতা। কবিতা শেষ হওয়া মুহুর্তেই সনু নিগম আর লতা গেয়ে ওঠে আমার প্রিয় সব থেকে ম্যাজিকাল গানটা, “কিউ হাওয়া আজ ইউ গা রা হি হে”। সনুর কণ্ঠের সাথে কণ্ঠ মিলিয়ে স্ক্রিনে চলে আসে আমার প্রিয় সুপারস্টার শাহরুখ খান। সাদা জামা পড়ে সাদা নৌকায় ভেসে প্রকৃতির সাথে মিশে যাওয়ার দৃশ্য আমাকে আজও অনুপ্রেরণা দেয় প্রকৃতির সাথে এভাবে একাত্বতা ঘোষনা করার। মুভির শুরুতেই এই গান মনের মধ্যে একটা প্রশান্তি দেয়। মুভি দেখার আগ্রহ কয়েকগুন বাড়িয়ে দেয়।   এই গান শেষ হওয়া মুহুর্তেই দেখা যায়, বৃদ্ধ বীর প্রতাপ সিং স্বপ্নে জারা হায়াত খানকে গুলি খেতে দেখে ধরফর করে ঘুম ভেঙ্গে উঠে বসে। শাহরুখ খানের এই বৃদ্ধ চরিত্র তার ক্যারিয়ারে উজ্জ্বল নক্ষত্র হয়ে থাকবে আজীবন। ২২ বছর ধরে বীর প্রতাপ সিং নিজেকে জেলে বন্দী করে রেখেছে। এই ২২ বছরে কারো সাথে একটা কথা পর্যন্ত বলেনি। শুধুমাত্র জারার সন্মান রক্ষার্থে। কেউ তার গল্প জানেনা। হঠাৎ একদিন সামিয়া সিদ্দিকি নামের একজন হিউমান রাইটস লয়ার এগিয়ে এলো এই বীর প্রতাপ সিং এর গল্প জানার জন্য। ২২ বছর ধরে যেই মানুষটাকে সবাই কয়েদী নম্বর ৭৮৬ ব

Anveshanam (2020)

No Spoiler মুভির নাম Anveshanam , এটি একটি মালায়ালাম মুভি। মুভিতে একটা দৃশ্য দেখে বহু বছর পরে বুক কেঁপে উঠেছিলো। অত্যন্ত চমৎকার একটা মুভি। সিরিয়াল কিলার রিলেটেড থ্রিলার মুভি দেখতে দেখতে বিরক্ত ধরে গেলে চট করে এই হাসপাতাল পরিবেশে বানানো থ্রিলার মুভিটি দেখে ফেলুন। থ্রিলার মুভির নানান ধরণ আছে। আমার কাছে এই ধরণের থ্রিলার বেশি ভালো লাগে। সব থেকে বেশি ভালো লেগেছে এর ব্যাকগ্রাউন্ড মিউজিক। দূর্দান্ত লেগেছে। প্লট অনুযায়ী পারফেক্ট মিউজিক।   আমি প্রথমে ট্রেইলার দেখেছিলাম। ট্রেইলার অর্ধেক দেখেই আমার আগ্রহ জাগে এবং সাথে সাথে ডাউনলোড দিয়ে দেখতে বসে গেছি। আপনারা চাইলে ট্রেইলারটা দেখে আসতে পারেন। আগ্রহ জাগানোর জন্য প্লট সম্পর্কে একটু বলি। হাসপাতালে একটা বাচ্চা ভর্তি হয়েছে। বলা হচ্ছে বাচ্চাটা এক্সিডেন্ট করেছে। পুলিশ এসে ইনভেস্টিগেশন শুরু করলে দেখা যায় বাচ্চার বাবা মা থেকে শুরু করে প্রত্যেকে প্রত্যেকের জায়গা থেকে মিথ্যা কথা বলছে। কিছু একটা লুকাচ্ছে। কি লুকাচ্ছে? সেটাই রহস্য। এই রহস্যে জানতেই মুভিটা দেখতে হবে।   এই মুভির কোনো রিভিউ আমার চোখে পড়েনি। কিন্তু এই মুভি নিয়ে যথেষ্ট আলোচনা করা উচি