Skip to main content

হঠাৎ বর্ষা, ভালোবাসার বর্ষা

নাটকের জন্য লিখেছিলাম। নাটক শুট করা হয়েছে। এখনো এডিট করা হয়নি।

জুপন চন্দ্রাহত নামের একটা বাড়ির সামনে দাড়িয়ে আছে। বাড়ির নামটা সুন্দর। চন্দ্র দেখে আহত। এই বাড়িতে লামিয়া থাকে। সে আজ লামিয়াকে তার ভালোবাসার কথা বলবে। কয়েকদিন আগে সে লামিয়াকে দেখেছে। প্রেম ভালোবাসা থেকে সে আজীবন দুরেই থেকেছে। কিন্তু এই মেয়ের জন্য আজ সে বেয়াহার মতো সেই মেয়ের বাড়ির সামনে দাড়িয়ে আছে।

এখন সকাল। একটু আগে জানালায় লামিয়ার সাথে চোখাচোখি হয়েছে। বাড়ির দারোয়ান কে বলেছে সে লামিয়ার সাথে কথা বলতে চায়, এই খবর ভিতরে চলে গেছে। বাড়ির সবাই একবার করে এসে দেখে যাচ্ছে জুপনকে। রোগা জীর্ণশীর্ণ একটা ছেলে। চুল উস্কখুস্ক। দেখেই বোঝা যায় বেকার। কিংবা ভিক্ষুক শ্রেণীর কেউ। সবাই একবার করে দেখছে আর মুখ বাকাচ্ছে। সব থেকে বেশি অবাক হয়েছে লামিয়া। সে এই ছেলেকে চেনেনা। ওই দিকে তার ভাই সুজন তাকে জেরা করেই যাচ্ছে সে চেনে কিনা। লামিয়া বারবার একটা কথাই বলছে যে সে চেনেনা।

লামিয়াদের বাড়ির সামনের চায়ের দোকানে সুজন আর জুপন বসে আছে। সুজন আর জুপনের মধ্যে কথা হচ্ছে।

সুজনঃ আপনি কে?
জুপনঃ আমি জুপন।
সুজনঃ লামিয়া কে চেনেন?
জুপনঃ না চিনিনা। গত পরশুদিন জাহাঙ্গীরনগরে দেখেছি। সেখান থেকে ফলো করে এসেছি।
সুজনঃ কি জন্য?
জুপনঃ কথা বলার জন্য।
সুজনঃ কি কথা?
জুপনঃ ভাই আপনি কি পাথর? নাকি মানুষ? রোবটের মতো আচরণ করছেন কেন? চায়ে কি চিনি কম হয়েছে? চিনি দিতে বলবো?
সুজনঃ থাপ্রায়া তোর জবান বন করায় দিবো। কথা কম কবি হালার পুত। যা জিগাই তার উত্তর দে।
জুপনঃ কি কথা সেটা আপনাকে বলবো না। লামিয়াকেই বলবো। তাকে ডাকেন।
সুজনঃ আমারে বলবি না?
জুপনঃ না
সুজনঃ বলবি নাতো?
জুপনঃ না। ভদ্রলোকের এক জবান।

সুজন চোখ রাঙ্গিয়ে রাগে গজগজ করতে করতে চলে গেলো। ভিতরে গিয়ে সব খুলে বললো। সবাই চুপ মেরে গেলো। সুজন ততক্ষণে তার সব বন্ধুদের ডাক দিলো। সবাই এসে বাড়ির সামনে জড়ো হলো। জুপন তখনো সেখানে হাসিহাসি মুখ করে দাড়িয়ে আছে। সুজনের বন্ধুরা এসে ধমকাধমকি করে গেলো। তাতেও কাজ হলো না। সুজনকে ঠাণ্ডা করে সুজনের বন্ধুরা বলল, "ও থাক। দ্যাখ কতক্ষণ থাকতে পারে। ওরে পাত্তা না দিলে ও এমনিতেই চলে যাবে।" যথাযথ ভাবে কেউ ওকে আর পাত্তা দিলো না। যে যার মতো থাকলো। জুপন সেখানে দাড়িয়ে রইলো। সারাদিন গেলো। দুপুর, বিকেল, সন্ধ্যা গেলো। রাতে ঝুম বৃষ্টি নামলো। জুপন চন্দ্রাহত বাড়ির সামনে বসে আছে। সে বৃষ্টিতে ভিজছে। কেউ জানেনা। সবাই জুপনকে ভুলেই গেছে।

ভোরবেলা লামিয়া জানালায় এসে অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে জুপনের দিকে। জুপন তখন হালকা কাঁপছে। লামিয়া তাকানোর সাথে সাথেই সে একটা হাসি দিলো। আর লামিয়ার সেই হাসি দেখে সারা শরীরে কাঁটা দিয়ে উঠলো। সে দৌড়ে ঘরের ভিতর গিয়ে সবাইকে জানালো।

জুপনের সামনে সুজন। তার পিছনে তার বন্ধুরা। তাদেরও পিছনে লামিয়া। তারা লামিয়ার সাথে ছেলেটাকে কথা বলায় দিবে বলে ঠিক করেছে। কিন্তু তারা সেখানে থাকবে। জুপন আর লামিয়া কথা বলছে।

লামিয়াঃ আপনি কে?
জুপনঃ আমি জুপন।
লামিয়াঃ কি চান আমার কাছে?
জুপনঃ ভালোবাসা। আমি তোমাকে ভালোবাসি।
লামিয়াঃ এসব আপনি কি বলছেন? এটা তো সম্ভব না। চিনিনা জানিনা একজন কে কি ভালোবাসা যায়? বলেন?

জুপনের তখন সমস্ত দুনিয়া উল্টায় আসছে। মনে হচ্ছে ধপাস করে মাটিতে পড়ে যাবে। বমি আসছে। গতকাল সারাদিনে কিছু খাওয়া হয়নি। তার মধ্যে সারারাত বৃষ্টিতে ভিজেছে। জুপন লামিয়ার দিকে মৃত মানুষের মতো তাকিয়ে বলছে, "আমি তোমাকে ভালোবাসি"। সে বলেই যাচ্ছে, "আমি তোমাকে ভালোবাসি" "আমি তোমাকে ভালোবাসি" "আমি তোমাকে ভালোবাসি"।

জুপন আধো আধো চোখ মেলে তাকালো। নাকে ঝাঁঝালো গন্ধ। সে শুয়ে আছে সরকারী একটা হাসপাতালে। নার্সকে জিজ্ঞাসা করে জানলো এখানে সে তিন দিন ধরে মরা মানুষের মতো শুয়ে আছে। তিন দিন আগে কিছু ছেলে এসে ওকে এখানে ভর্তি করিয়ে দিয়ে গেছে। জুপন সব শুনে একটা হাসি দিলো। সমস্ত শরীর দুর্বল। সে উঠে দাঁড়ালো। তার কিছু খাওয়া দরকার।

সময় দুপুর। জুপন দাড়িয়ে আছে চন্দ্রাহতের সামনে। সন্ধার দিকে পুলিশ এসে জুপনকে ধরে নিয়ে চলে গেলো। পুলিশ সারারাত ধরে বেধর মার মারলো। সাতদিন পর তাকে ছেড়ে দেওয়া হলো। সে হাঁটতে পারছে না। কুঁজো হয়ে হাটছে। কথা বলতে পারছে না। ঠোঁট কাঁপছে। এত কিছুর পরেও তার চোখে আত্মবিশ্বাস কাজ করছে।

সময় সকাল। জুপন চন্দ্রাহতের সামনে দাড়িয়ে আছে। আজ বেশিক্ষণ দাড়াতে হলো না। একবেলা বাদেই লামিয়া নেমে এলো। জুপন আর লামিয়া কথা বলছে।

লামিয়াঃ আপনি আমাকে ভালবাসেন?
জুপনঃ হ্যাঁ।
লামিয়াঃ কেন?
জুপনঃ জানিনা।
লামিয়াঃ আপনার আর কিছু বলার আছে?
জুপনঃ আমাকে বিয়ে করবে?
লামিয়াঃ আপনার মতো ভ্যাগাবন্ডকে কে বিয়ে করবে?
জুপনঃ আমি ভ্যাগাবন্ড তোমাকে কে বলল?
লামিয়াঃ তাহলে?
জুপনঃ তুমি আমাকে ভালোবাসো?
লামিয়াঃ হ্যাঁ বাসি।
জুপনঃ কখন থেকে?
লামিয়াঃ তখন থেকে যখন আপনি অজ্ঞান হয়ে গেলেন এবং তারপরেও বলতেই লাগলেন, আমি তোমাকে ভালোবাসি। আমি তোমাকে ভালোবাসি। ওইসময়ই আপনার প্রেমে পড়ে গেলাম।
জুপনঃ একটু পরেই বৃষ্টি নামবে। ভিজবে।
লামিয়াঃ হ্যাঁ ভিজবো।
জুপনঃ তোমার হাতটা একটু ধরি?
লামিয়া কিছু বলল না। তারা দুইজন এগিয়ে চলল। অলস দুপুরের মেঘ ডেকে বললো, তোমরা এগিয়ে এসো, তোমাদের সিক্ত করি শীতল হাওয়ায়। ভালোবাসার বর্ষায়।

Comments

Popular posts from this blog

রহস্যময় ভালবাসা

ভুমিকা ভুমিকা সাধারনত উপন্যাসের হয় কিংবা রচনা জাতীয় কোনো লেখায় হয়। একটা গল্পের জন্য ভুমিকা লেখা হাস্যকর। তবুও লিখলাম। এই গল্পের সাথে বাস্তবের কোনো মিল নেই। এটা শুধুই কল্পনা দিয়ে লেখা। তবে নাম গুলোর অস্থিত্ত্ব আছে। ভুতের গল্প লিখতে চেয়েছিলাম। যে গল্প মাথায় ছিল সেটা তেমন ভয়ঙ্কর বলে আমার মনে হলো না। কিংবা আমি হয়ত ভয়ঙ্কর কিছু লিখতে পারতাম না। তাই লিখলাম না। আশা করি এই গল্পটা পড়ে খুব বেশি বিরক্ত হবেন না। যদি আপনার ভালো লাগে তাহলে ধন্যবাদ। ভালো না লাগলেও ধন্যবাদ।  ইশতিয়াক আহমেদ চৌধুরী টুটপাড়া ঘোষের ভিটা, খুলনা ২০.০৯.২০১২  উৎসর্গ  একটা মানুষকে কি দুইবার উৎসর্গ করা যায়? এইটা সেই মানুষটার জন্য, যার কাছেই শুধুমাত্র আমি একজন লেখক। যার কাছে আমার ভালো কাজেরও মূল্য আছে, খারাপ কাজেরও মূল্য আছে। আমার অদ্ভুত আচরণে সে বিরক্ত হয়, আসলে সে মুগ্ধ হয় বলে আমার বিশ্বাস।  মানুষটা আমাকে অনেক ভালোবাসে, এত কেন ভালোবাসে, কিভাবে ভালোবাসে, আমি কিছুই জানিনা। আমার প্রিয় হলুদিয়া পাখি একটা মেয়ে কতটা সুন্দর হলে একটা ছেলে মেয়েটার দিকে মন্ত্রমুগ্ধ হয়ে তাকিয়ে থাকে? একটা মেয়ে ঠিক কতটা সুন্দর হলে

Veer Zaara

  Spoiler Alert শুরুতেই ইয়াশ চোপড়ার ম্যাজিকাল কণ্ঠে কবিতা। কবিতা শেষ হওয়া মুহুর্তেই সনু নিগম আর লতা গেয়ে ওঠে আমার প্রিয় সব থেকে ম্যাজিকাল গানটা, “কিউ হাওয়া আজ ইউ গা রা হি হে”। সনুর কণ্ঠের সাথে কণ্ঠ মিলিয়ে স্ক্রিনে চলে আসে আমার প্রিয় সুপারস্টার শাহরুখ খান। সাদা জামা পড়ে সাদা নৌকায় ভেসে প্রকৃতির সাথে মিশে যাওয়ার দৃশ্য আমাকে আজও অনুপ্রেরণা দেয় প্রকৃতির সাথে এভাবে একাত্বতা ঘোষনা করার। মুভির শুরুতেই এই গান মনের মধ্যে একটা প্রশান্তি দেয়। মুভি দেখার আগ্রহ কয়েকগুন বাড়িয়ে দেয়।   এই গান শেষ হওয়া মুহুর্তেই দেখা যায়, বৃদ্ধ বীর প্রতাপ সিং স্বপ্নে জারা হায়াত খানকে গুলি খেতে দেখে ধরফর করে ঘুম ভেঙ্গে উঠে বসে। শাহরুখ খানের এই বৃদ্ধ চরিত্র তার ক্যারিয়ারে উজ্জ্বল নক্ষত্র হয়ে থাকবে আজীবন। ২২ বছর ধরে বীর প্রতাপ সিং নিজেকে জেলে বন্দী করে রেখেছে। এই ২২ বছরে কারো সাথে একটা কথা পর্যন্ত বলেনি। শুধুমাত্র জারার সন্মান রক্ষার্থে। কেউ তার গল্প জানেনা। হঠাৎ একদিন সামিয়া সিদ্দিকি নামের একজন হিউমান রাইটস লয়ার এগিয়ে এলো এই বীর প্রতাপ সিং এর গল্প জানার জন্য। ২২ বছর ধরে যেই মানুষটাকে সবাই কয়েদী নম্বর ৭৮৬ ব

Anveshanam (2020)

No Spoiler মুভির নাম Anveshanam , এটি একটি মালায়ালাম মুভি। মুভিতে একটা দৃশ্য দেখে বহু বছর পরে বুক কেঁপে উঠেছিলো। অত্যন্ত চমৎকার একটা মুভি। সিরিয়াল কিলার রিলেটেড থ্রিলার মুভি দেখতে দেখতে বিরক্ত ধরে গেলে চট করে এই হাসপাতাল পরিবেশে বানানো থ্রিলার মুভিটি দেখে ফেলুন। থ্রিলার মুভির নানান ধরণ আছে। আমার কাছে এই ধরণের থ্রিলার বেশি ভালো লাগে। সব থেকে বেশি ভালো লেগেছে এর ব্যাকগ্রাউন্ড মিউজিক। দূর্দান্ত লেগেছে। প্লট অনুযায়ী পারফেক্ট মিউজিক।   আমি প্রথমে ট্রেইলার দেখেছিলাম। ট্রেইলার অর্ধেক দেখেই আমার আগ্রহ জাগে এবং সাথে সাথে ডাউনলোড দিয়ে দেখতে বসে গেছি। আপনারা চাইলে ট্রেইলারটা দেখে আসতে পারেন। আগ্রহ জাগানোর জন্য প্লট সম্পর্কে একটু বলি। হাসপাতালে একটা বাচ্চা ভর্তি হয়েছে। বলা হচ্ছে বাচ্চাটা এক্সিডেন্ট করেছে। পুলিশ এসে ইনভেস্টিগেশন শুরু করলে দেখা যায় বাচ্চার বাবা মা থেকে শুরু করে প্রত্যেকে প্রত্যেকের জায়গা থেকে মিথ্যা কথা বলছে। কিছু একটা লুকাচ্ছে। কি লুকাচ্ছে? সেটাই রহস্য। এই রহস্যে জানতেই মুভিটা দেখতে হবে।   এই মুভির কোনো রিভিউ আমার চোখে পড়েনি। কিন্তু এই মুভি নিয়ে যথেষ্ট আলোচনা করা উচি