Skip to main content

সিক্ত ভালোবাসা

উৎসর্গঃ  

তানভী ইসলাম কুমকুম

একটা প্রশ্ন করেছিলে। উত্তর দিতে পারিনি। তবে একটা কথা বলতে পারি। সবাই ভালবাসায় সিক্ত থাকতে পারে না। আমি ভালবাসায় সিক্ত থাকতে চাই। হারিয়ে যেতে চাই না।


জাহান তাকিয়ে আছে পানির দিকে। তার এই পুকুরটা খুব প্রিয়। তার মন খারাপ থাকলে কিংবা খুব ভালো থাকলে সে এই পুকুর পাড়ে এসে বসে। আজ তার মন ভালো নাকি খারাপ বোঝা যাচ্ছে না। বিকেলের আলো এসে পড়েছে জাহানের মুখে। তাকে অপ্সরীর মত লাগছে। আজ বিকেলের আলো অনেক শান্ত। হয়ত জাহানের জন্য।

জাহান অদ্ভুত ভাবে তাকিয়ে আছে পানির দিকে। নিজেকে চিনতে পারছে না। মনে হচ্ছে অন্য ভুবনের কেউ। আচ্ছা, এই অন্য ভুবন কি আদৌ আছে? সেখানে কি যাওয়া যায়? সেখানে গেলে কি তার সমস্ত স্মৃতি হারিয়ে যাবে? অন্তত গত আট বছর? নিজেকে ভুলে যাওয়া যাবে? অন্তত নিজের নাম?

জাহান কাঁদছে। শব্দ করে না, নীরবে। সুর্য ডুববে। কোথাও কারোর বিয়ে হবে। জাহান প্রার্থনা করবে। নিস্তব্ধ প্রার্থনা। গুটিসুটি মেরে বসে থাকা জাহানের পাশে এসে পরিমনি বসলো।

আপা আপনে কি কানতেছেন?
- না।
তাইলে আপনার চোখে পানি ক্যান?
- আনন্দের পানি।
কিসের আনন্দ?
- হারিয়ে যাবার আনন্দ।
আপা, আপনে এসব কি কন আউলাঝাউলা?
- পরিমনি, পৃথিবীর প্রতিটা মানুষই এক সময় হারিয়ে যায়। কোনো মানুষ সারা জীবন এক জায়গায় থাকে না।

পরিমনি কিছু বুঝলো না। সে আপার অনেক কথাই বোঝে না। না বুঝে ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে থাকে। আজ সে ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে থাকার বদলে তার আপার মত গুটিসুটি মেরে বসে রইলো।

ফাগুন বসে আছে বিয়ের পিড়িতে। এই গোধূলি লগনে তার বিয়ে। ফাগুনের বুক কাঁপছে। আনন্দ উত্তেজনায় নাকি কোনো কিছুর অভাবে? সে বুঝতে পারছে না। সময় হয়ে এসেছে। দূরে কোথাও গুটিসুটি মেরে বসে থাকা জাহান চোখ বন্ধ করে প্রার্থনা করছে আর ফাগুন নির্বিকার ভঙ্গিতে মন্ত্র পড়ছে, " যদিদং রিদয়ং তব, তদিতং রিদয়ং মম।" একটা ভালোবাসার শেষ হলো আর আরেকটা ভালোবাসার শুরু।

জাহান চোখ মেলে দেখলো আলো নেই। কেউ নেই। পরিমনি ছিল, এখন সেও নেই। জাহান উঠে দাঁড়ালো। ধীরে ধীরে হেঁটে পানিতে নামলো। নিজেকে ভাসিয়ে দিল পানিতে। হঠাৎ মনে হলে, কেউ অনেক দিন ধরে তার কাঁধে চেপে ছিল, সে আজ নেমে গেছে। সে নির্বিকার ভঙ্গিতে তাকিয়ে আছে কেবল সন্ধ্যা হওয়া আকাশের দিকে।

Comments

Popular posts from this blog

রহস্যময় ভালবাসা

ভুমিকা ভুমিকা সাধারনত উপন্যাসের হয় কিংবা রচনা জাতীয় কোনো লেখায় হয়। একটা গল্পের জন্য ভুমিকা লেখা হাস্যকর। তবুও লিখলাম। এই গল্পের সাথে বাস্তবের কোনো মিল নেই। এটা শুধুই কল্পনা দিয়ে লেখা। তবে নাম গুলোর অস্থিত্ত্ব আছে। ভুতের গল্প লিখতে চেয়েছিলাম। যে গল্প মাথায় ছিল সেটা তেমন ভয়ঙ্কর বলে আমার মনে হলো না। কিংবা আমি হয়ত ভয়ঙ্কর কিছু লিখতে পারতাম না। তাই লিখলাম না। আশা করি এই গল্পটা পড়ে খুব বেশি বিরক্ত হবেন না। যদি আপনার ভালো লাগে তাহলে ধন্যবাদ। ভালো না লাগলেও ধন্যবাদ।  ইশতিয়াক আহমেদ চৌধুরী টুটপাড়া ঘোষের ভিটা, খুলনা ২০.০৯.২০১২  উৎসর্গ  একটা মানুষকে কি দুইবার উৎসর্গ করা যায়? এইটা সেই মানুষটার জন্য, যার কাছেই শুধুমাত্র আমি একজন লেখক। যার কাছে আমার ভালো কাজেরও মূল্য আছে, খারাপ কাজেরও মূল্য আছে। আমার অদ্ভুত আচরণে সে বিরক্ত হয়, আসলে সে মুগ্ধ হয় বলে আমার বিশ্বাস।  মানুষটা আমাকে অনেক ভালোবাসে, এত কেন ভালোবাসে, কিভাবে ভালোবাসে, আমি কিছুই জানিনা। আমার প্রিয় হলুদিয়া পাখি একটা মেয়ে কতটা সুন্দর হলে একটা ছেলে মেয়েটার দিকে মন্ত্রমুগ্ধ হয়ে তাকিয়ে থাকে? একটা মেয়ে ঠিক কতটা সুন্দর হলে

Veer Zaara

  Spoiler Alert শুরুতেই ইয়াশ চোপড়ার ম্যাজিকাল কণ্ঠে কবিতা। কবিতা শেষ হওয়া মুহুর্তেই সনু নিগম আর লতা গেয়ে ওঠে আমার প্রিয় সব থেকে ম্যাজিকাল গানটা, “কিউ হাওয়া আজ ইউ গা রা হি হে”। সনুর কণ্ঠের সাথে কণ্ঠ মিলিয়ে স্ক্রিনে চলে আসে আমার প্রিয় সুপারস্টার শাহরুখ খান। সাদা জামা পড়ে সাদা নৌকায় ভেসে প্রকৃতির সাথে মিশে যাওয়ার দৃশ্য আমাকে আজও অনুপ্রেরণা দেয় প্রকৃতির সাথে এভাবে একাত্বতা ঘোষনা করার। মুভির শুরুতেই এই গান মনের মধ্যে একটা প্রশান্তি দেয়। মুভি দেখার আগ্রহ কয়েকগুন বাড়িয়ে দেয়।   এই গান শেষ হওয়া মুহুর্তেই দেখা যায়, বৃদ্ধ বীর প্রতাপ সিং স্বপ্নে জারা হায়াত খানকে গুলি খেতে দেখে ধরফর করে ঘুম ভেঙ্গে উঠে বসে। শাহরুখ খানের এই বৃদ্ধ চরিত্র তার ক্যারিয়ারে উজ্জ্বল নক্ষত্র হয়ে থাকবে আজীবন। ২২ বছর ধরে বীর প্রতাপ সিং নিজেকে জেলে বন্দী করে রেখেছে। এই ২২ বছরে কারো সাথে একটা কথা পর্যন্ত বলেনি। শুধুমাত্র জারার সন্মান রক্ষার্থে। কেউ তার গল্প জানেনা। হঠাৎ একদিন সামিয়া সিদ্দিকি নামের একজন হিউমান রাইটস লয়ার এগিয়ে এলো এই বীর প্রতাপ সিং এর গল্প জানার জন্য। ২২ বছর ধরে যেই মানুষটাকে সবাই কয়েদী নম্বর ৭৮৬ ব

Anveshanam (2020)

No Spoiler মুভির নাম Anveshanam , এটি একটি মালায়ালাম মুভি। মুভিতে একটা দৃশ্য দেখে বহু বছর পরে বুক কেঁপে উঠেছিলো। অত্যন্ত চমৎকার একটা মুভি। সিরিয়াল কিলার রিলেটেড থ্রিলার মুভি দেখতে দেখতে বিরক্ত ধরে গেলে চট করে এই হাসপাতাল পরিবেশে বানানো থ্রিলার মুভিটি দেখে ফেলুন। থ্রিলার মুভির নানান ধরণ আছে। আমার কাছে এই ধরণের থ্রিলার বেশি ভালো লাগে। সব থেকে বেশি ভালো লেগেছে এর ব্যাকগ্রাউন্ড মিউজিক। দূর্দান্ত লেগেছে। প্লট অনুযায়ী পারফেক্ট মিউজিক।   আমি প্রথমে ট্রেইলার দেখেছিলাম। ট্রেইলার অর্ধেক দেখেই আমার আগ্রহ জাগে এবং সাথে সাথে ডাউনলোড দিয়ে দেখতে বসে গেছি। আপনারা চাইলে ট্রেইলারটা দেখে আসতে পারেন। আগ্রহ জাগানোর জন্য প্লট সম্পর্কে একটু বলি। হাসপাতালে একটা বাচ্চা ভর্তি হয়েছে। বলা হচ্ছে বাচ্চাটা এক্সিডেন্ট করেছে। পুলিশ এসে ইনভেস্টিগেশন শুরু করলে দেখা যায় বাচ্চার বাবা মা থেকে শুরু করে প্রত্যেকে প্রত্যেকের জায়গা থেকে মিথ্যা কথা বলছে। কিছু একটা লুকাচ্ছে। কি লুকাচ্ছে? সেটাই রহস্য। এই রহস্যে জানতেই মুভিটা দেখতে হবে।   এই মুভির কোনো রিভিউ আমার চোখে পড়েনি। কিন্তু এই মুভি নিয়ে যথেষ্ট আলোচনা করা উচি