Skip to main content

শেষ স্বপ্ন পূরণ

বাইরে বের হয়েই নিমোসীনির মেজাজ খারাপ হয়ে গেলো। একটা রিক্সা নাই। অবশ্য এতো ভোর বেলা রিক্সা পাওয়ার কথা না। কিন্তু তারপরেও তার মেজাজ খারাপ হচ্ছে। কারন সে চায়, অন্তত আজকের দিনটা পরিকল্পনা অনুযায়ী কাটুক। এটাই সমস্যা। পরিকল্পনা অনুযায়ী কিছুই হয়না। আরেকবার সব ঠিক আছে কিনা দেখে, গটগট করে গলির মোড়ের দিকে রওনা দিলো। মোড়ে গিয়ে দেখলো, মোটাসোটা একটা লোক রিক্সায় বসে ঝিমুচ্ছে। আর একটা রিক্সাও নেই। কোনো মতে লোকটাকে জাগিয়ে বলল, "মামা চলেন, টাকা বেশি দিবো। যত তাড়াতাড়ি পারেন চালাবেন।" বলেই রিক্সায় উঠে বসলো। ভাগ্য ভাল থাকলে ৮ টার মধ্যে জায়গা মত পোঁছালে হয়। নাহ, রিক্সা ভালোই চালাচ্ছে। ঝিমাতে ঝিমাতে কেউ এতো ভালো রিক্সা চালায় জানা ছিল না।

নিমোসীনি দাড়িয়ে আছে একটা বাড়ির সামনে। বাড়ির নাম জ্যোৎস্নাবিলাস। নিমোসীনি প্রায় ভাবে, আর কিছু বাকি আছে এই বিলাসের আগে লাগানোর জন্য? তবে এটা ভালো লাগে। কেন লাগে তার কোনো ব্যাক্ষা নেই। সুরুজ মিয়া গেট খুলে বের হয়ে এলো। নিমোসীনিকে দেখেই এক গাল হাসি দিলো, বলল, "আপা আসছেন? ডাকেন নাই ক্যান?" নিমোসীনি বলল, "ডাকতে যাচ্ছিলাম তার আগেই আপনি বের হয়েছেন।" বলেই ভিতরে গেলো। অনেক কাজ আছে। বিশেষ করে, কাজ গুলো সাবধানে করতে হবে। খুবই সাবধানে।

প্রায় ৫ মিনিট ধরে সে দরজা খুলছে চাবি দিয়ে। এতটাই ধিরে ধিরে এবং আস্তে আস্তে খুলছে যে আশেপাশে যদি পিঁপড়া থাকে সেও যেন টের না পায়। দরজা খুলে সে ভিতরে ঢুকল। এবার আবার সেই ৫ মিনিট ধরে দরজা লাগালো। সে জানে ফিবাসের ঘুম অনেক পাতলা। একটু শব্দ হলেই জেগে যাবে। চটপট গেস্ট রুমে গিয়ে বোরকা খুলে ফিবাসের দেওয়া লাল শাড়িটা পড়লো। এটা ঠিক বিয়ের লাল শাড়ির মত না। তবে অনেক সুন্দর। নিমোসীনির অনেক প্রিয় এই শাড়ি। লাল টিপ। লাল চুরি। সব লাল। নিমোসীনিকে অসম্ভব রূপবতী লাগছে। নিমোসীনি এমনিতেই অনেক সুন্দরী। কিন্তু এই লাল তাকে একটু আলাদা করে দেয়। সবসময়। বিড়ালের মত হেঁটে সে রান্নাঘরে ঢুকল। দুইকাপ কফি বানাবে। এটা সব থেকে ভয়ঙ্কর কাজ। এই কাজ করতে গেলে শব্দ হবার সম্ভবনা অনেক। নিমোসীনি অনেক সময় নিয়ে কফি বানালো। শব্দ হয়নি, তা না, হয়েছে। কিন্তু অনেক কম। টের পেলে এতক্ষণে সে জেগে যেত।

নিমোসীনি হাতে ট্রে নিয়ে ফিবাসের বিছানার পাশে দাড়িয়ে আছে। তার মুখে রোদের আলো এসে পড়েছে। অদ্ভুত লাগছে তাকে। ডাক দিলে এভাবে আর সে দেখতে পাবে না। হয়ত আর কোনোদিনও দেখতে পাবে না। ঘুমের মধ্যেই ফিবাস ডেকে উঠলো, "নিমোসীনি।"

অবাক হয়ে নিমোসীনি জিজ্ঞেস করলো, "তুমি বুঝলে কি করে?"
ঘুমের মধ্যেই সে বলতে লাগলো, "আমি তোমার গন্ধ চিনি।"

নিমোসীনি লজ্জা পেয়ে হেসে দিলো। টেবিলে ট্রে রেখে ফিবাসের মাথায় হাত রাখলো। বলল, "পাগল, শুভ সকাল।"
ফিবাস চোখ মেলতে মেলতে বলল, "পাখি, শুভ সকাল।" দুইজন দুইজনের দিকে অপলক তাকিয়ে আছে। চিরচেনা বাংলা সিনেমার নায়ক নায়িকাদের মত। নিমোসীনি বলল, "নাও, চা খাও।"
- বাসি মুখে চা খাবো না।
-- তাহলে?
- তোমাকে।
-- যাহ। মুখ ধুয়ে আসো তাহলে।
- না, তোমাকে।
-- এক ধাক্কা দিয়ে চায়ের মধ্যে ফেলে দেবো।
- হাহাহা। কবে সত্যি করে আমাকে ধাক্কা দিবা? বলত।
- জানিনা।
-- তো হটাৎ এই পাগলামি।
- জানিনা।
-- তোমাকে ভালোবাসি।
- আমিও।
-- কাল রাতে কয়টা তারা ছিল আকাশে জানো?
- কয়টা?
-- সাতটা।
- বাকি তারারা কই গেছিল?
-- প্রার্থনা করতে। যেন আর দুইদিন বেশি তোমার কাছে থাকতে পারি।
- তুমি আজীবন আমার কাছে থাকবা।
-- সত্যি?
- হ্যাঁ।

ফিবাস তাকিয়ে আছে নিমোসীনির দিকে। হটাৎ অনেক ভালোবাসা জড়ানো কণ্ঠে বলল, "ধন্যবাদ।" নিমোসীনি খুব স্বাভাবিক ভাবেই ফিবাসকে বুকে জড়িয়ে ধরলো। নিমোসীনির চোখ বেয়ে পানি বের হয়ে এলো। যে কিনা নিমোসীনিকে সান্ত্বনা দিলো, কোনো আফসোস নেই জীবনে। একটা সম্পূর্ণ নতুন এবং পরিপূর্ণ পৃথিবীতে এই ভালোবাসার আবার জন্ম হবে। তখন হয়ত আরো কিছুটা সময় জড়িয়ে কাঁদতে পারবে তুমি। ভালবাসতে পারবে। ইচ্ছা হলেই ধাক্কা দিয়ে পানিতে ফেলে দিতে পারবে।

Comments

Popular posts from this blog

রহস্যময় ভালবাসা

ভুমিকা ভুমিকা সাধারনত উপন্যাসের হয় কিংবা রচনা জাতীয় কোনো লেখায় হয়। একটা গল্পের জন্য ভুমিকা লেখা হাস্যকর। তবুও লিখলাম। এই গল্পের সাথে বাস্তবের কোনো মিল নেই। এটা শুধুই কল্পনা দিয়ে লেখা। তবে নাম গুলোর অস্থিত্ত্ব আছে। ভুতের গল্প লিখতে চেয়েছিলাম। যে গল্প মাথায় ছিল সেটা তেমন ভয়ঙ্কর বলে আমার মনে হলো না। কিংবা আমি হয়ত ভয়ঙ্কর কিছু লিখতে পারতাম না। তাই লিখলাম না। আশা করি এই গল্পটা পড়ে খুব বেশি বিরক্ত হবেন না। যদি আপনার ভালো লাগে তাহলে ধন্যবাদ। ভালো না লাগলেও ধন্যবাদ।  ইশতিয়াক আহমেদ চৌধুরী টুটপাড়া ঘোষের ভিটা, খুলনা ২০.০৯.২০১২  উৎসর্গ  একটা মানুষকে কি দুইবার উৎসর্গ করা যায়? এইটা সেই মানুষটার জন্য, যার কাছেই শুধুমাত্র আমি একজন লেখক। যার কাছে আমার ভালো কাজেরও মূল্য আছে, খারাপ কাজেরও মূল্য আছে। আমার অদ্ভুত আচরণে সে বিরক্ত হয়, আসলে সে মুগ্ধ হয় বলে আমার বিশ্বাস।  মানুষটা আমাকে অনেক ভালোবাসে, এত কেন ভালোবাসে, কিভাবে ভালোবাসে, আমি কিছুই জানিনা। আমার প্রিয় হলুদিয়া পাখি একটা মেয়ে কতটা সুন্দর হলে একটা ছেলে মেয়েটার দিকে মন্ত্রমুগ্ধ হয়ে তাকিয়ে থাকে? একটা মেয়ে ঠিক কতটা সুন্দর হলে

Veer Zaara

  Spoiler Alert শুরুতেই ইয়াশ চোপড়ার ম্যাজিকাল কণ্ঠে কবিতা। কবিতা শেষ হওয়া মুহুর্তেই সনু নিগম আর লতা গেয়ে ওঠে আমার প্রিয় সব থেকে ম্যাজিকাল গানটা, “কিউ হাওয়া আজ ইউ গা রা হি হে”। সনুর কণ্ঠের সাথে কণ্ঠ মিলিয়ে স্ক্রিনে চলে আসে আমার প্রিয় সুপারস্টার শাহরুখ খান। সাদা জামা পড়ে সাদা নৌকায় ভেসে প্রকৃতির সাথে মিশে যাওয়ার দৃশ্য আমাকে আজও অনুপ্রেরণা দেয় প্রকৃতির সাথে এভাবে একাত্বতা ঘোষনা করার। মুভির শুরুতেই এই গান মনের মধ্যে একটা প্রশান্তি দেয়। মুভি দেখার আগ্রহ কয়েকগুন বাড়িয়ে দেয়।   এই গান শেষ হওয়া মুহুর্তেই দেখা যায়, বৃদ্ধ বীর প্রতাপ সিং স্বপ্নে জারা হায়াত খানকে গুলি খেতে দেখে ধরফর করে ঘুম ভেঙ্গে উঠে বসে। শাহরুখ খানের এই বৃদ্ধ চরিত্র তার ক্যারিয়ারে উজ্জ্বল নক্ষত্র হয়ে থাকবে আজীবন। ২২ বছর ধরে বীর প্রতাপ সিং নিজেকে জেলে বন্দী করে রেখেছে। এই ২২ বছরে কারো সাথে একটা কথা পর্যন্ত বলেনি। শুধুমাত্র জারার সন্মান রক্ষার্থে। কেউ তার গল্প জানেনা। হঠাৎ একদিন সামিয়া সিদ্দিকি নামের একজন হিউমান রাইটস লয়ার এগিয়ে এলো এই বীর প্রতাপ সিং এর গল্প জানার জন্য। ২২ বছর ধরে যেই মানুষটাকে সবাই কয়েদী নম্বর ৭৮৬ ব

Anveshanam (2020)

No Spoiler মুভির নাম Anveshanam , এটি একটি মালায়ালাম মুভি। মুভিতে একটা দৃশ্য দেখে বহু বছর পরে বুক কেঁপে উঠেছিলো। অত্যন্ত চমৎকার একটা মুভি। সিরিয়াল কিলার রিলেটেড থ্রিলার মুভি দেখতে দেখতে বিরক্ত ধরে গেলে চট করে এই হাসপাতাল পরিবেশে বানানো থ্রিলার মুভিটি দেখে ফেলুন। থ্রিলার মুভির নানান ধরণ আছে। আমার কাছে এই ধরণের থ্রিলার বেশি ভালো লাগে। সব থেকে বেশি ভালো লেগেছে এর ব্যাকগ্রাউন্ড মিউজিক। দূর্দান্ত লেগেছে। প্লট অনুযায়ী পারফেক্ট মিউজিক।   আমি প্রথমে ট্রেইলার দেখেছিলাম। ট্রেইলার অর্ধেক দেখেই আমার আগ্রহ জাগে এবং সাথে সাথে ডাউনলোড দিয়ে দেখতে বসে গেছি। আপনারা চাইলে ট্রেইলারটা দেখে আসতে পারেন। আগ্রহ জাগানোর জন্য প্লট সম্পর্কে একটু বলি। হাসপাতালে একটা বাচ্চা ভর্তি হয়েছে। বলা হচ্ছে বাচ্চাটা এক্সিডেন্ট করেছে। পুলিশ এসে ইনভেস্টিগেশন শুরু করলে দেখা যায় বাচ্চার বাবা মা থেকে শুরু করে প্রত্যেকে প্রত্যেকের জায়গা থেকে মিথ্যা কথা বলছে। কিছু একটা লুকাচ্ছে। কি লুকাচ্ছে? সেটাই রহস্য। এই রহস্যে জানতেই মুভিটা দেখতে হবে।   এই মুভির কোনো রিভিউ আমার চোখে পড়েনি। কিন্তু এই মুভি নিয়ে যথেষ্ট আলোচনা করা উচি