Skip to main content

এক গুচ্ছ ভালোবাসা কিংবা ভুল

উৎসর্গঃ 

সোফিনা ই আরব

তোমার কাছ থেকেই প্রথম বই নিয়ে পড়তে শুরু করি। ভালো একটা অভ্যাস তুমি তৈরি করে দিয়েছ। সেই জন্য তোমাকে অসংখ্য ধন্যবাদ। গল্পটা কষ্ট করে পড়ার জন্যও ধন্যবাদ। আমার নিজের কোনো বোন নেই। তুমিই আমার বড় বোন। ভালোবাসি বললেই কি ভালোবাসা হয়ে যায়? তবে তোমাকে ভালোবাসি। অনেক বেশি "লাভলি" হও। অনেক বেশি "হ্যাপি" হও।


নীলাকে লাল শাড়িতে অদ্ভুত লাগছে। সে একা একটা সোফায় মাথা নিচু করে বসে আছে। মনে হচ্ছে সোফায় একটা পুতুল বসে আছে। বাম পাশে তার বাবা তার সম্ভাব্য হবু শ্বশুরের সাথে কথা বলছে। আর ডান পাশে তার সম্ভাব্য শাশুড়ি তার দিকে ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে আছে। হয়ত তিনি জীবিতকালে এমন রূপবতী মেয়ে দেখেননি।

নীলার কিছুটা বিরক্ত লাগছে। ক্যামেরার ক্লিক ক্লিক শব্দ কানে বাজছে। বেজেই যাচ্ছে। মাথা নিচু করে রাখা সত্ত্বেও ফ্ল্যাশের আলো চোখে লাগছে। এত কিছুর পরেও তার মাথায় সৈকত নামের একটা ছেলে কোনো রকম দুশ্চিন্তা ছাড়াই হেসে যাচ্ছে। হাসিটা সুন্দর। এই হাসি দেখেই যে মুগ্ধ হয়েছিল।

কি আশ্চর্য ! ভুল সময়ে ভুল মানুষের কথা কেন চিন্তা হচ্ছে? সে তো সৈকতকে ভালোবাসেনি। যাকে ভালবেসেছে তার সাথেই তো তার বিয়ে ঠিক হয়েছে। আজ বাদে কাল পরশু তার পাশে ঘুমাবে। একটা বারান্দা থাকবে, সেখানে তাকে নিয়ে কফি খাবে, সেখানে তো সৈকতের তো কোনো স্থান নেই। তবে তার চিন্তা কেন?
আপনি কেন এসেছেন?

- তোমাকে দেখতে। ভড়কে গেছি তোমাকে দেখে। তুমি তো মানুষ না, পুতুল।
তাই না? ভাল লাগছে আমাকে?
- হু। অনেক। মানুষের কিছু ভুল অনেক সুন্দর হয়।
মানে?
- তুমি আমার জীবনের অনেক বড় একটা ভুল।
হিহিহি। এখন বুঝতে পেরে আর কি হবে? সময় মত তো বুঝেননি। ভাল কথা আপনি যে এসেছেন আপু জানলে কিন্তু আপনাকে খুন করে ফেলবে। হিহিহি।
- হুম। সেটাই। আচ্ছা আমাদের সম্পর্কটা আসলে কি? বলত? ছয় বছর হয়ে গেলো। কেউ এখনো বুঝেই উঠতে পারলাম না আমাদের মধ্যে কি হচ্ছে?
আমি জানিনা, আচ্ছা আপনার কি মনে হয়? ভাল কথা আমার গিফট কই?
- আচ্ছা তুমি যেমন আমার ভুল। আমিও কি তোমার ভুল?
নাহ। আমি আপনাকে কখনো সিরিয়াসলি নেই নাই।
- আচ্ছা আমি যে তোমার মাথায় এতক্ষণ ধরে বসে আছি। বিরক্ত লাগছে না?

এই পর্যায়ে নীলার হবু শাশুড়ি নীলার হাতে আংটি পরিয়ে দিচ্ছে। নীলা তাকিয়ে আছে তার হাতের দিকে। কি অদ্ভুত, এই হাত সৈকত কখনো ধরেনি। তবুও তার প্রতি এত মায়া? কেন? কিসের জন্য? নীলা সাময়িক সময়ের জন্য সৈকতকে শাট ডাউন দেওয়ার চেস্টা করছে। কোনো চেষ্টাই কাজে লাগছে না। ভদ্রমহিলা নীলার হাতে আংটি পরিয়ে দিয়েছে। সবাই হাত তালি দিচ্ছে। ক্লিক ক্লিক করে ছবি তুলছে। নীলার বাম চোখ দিয়ে পানি পড়ছে। এটা কি খুশির জন্য নাকি মাথা থেকে সৈকতকে সরাতে পারছে না সেই জন্য? সে জানেনা।

নীলা গোছল করে নীল সালোয়ার-কামিজ পরেছে। পাশে একটা ব্যাগ গুছিয়ে রাখা। আর মাত্র সাত মিনিট পরে ভোর হবে। নীলা ভোরের আলোর জন্য অপেক্ষা করছে। চারিদিক আলো হলেই বের হয়ে পড়বে সেইরকম পরিকল্পনা। তবে শেষ পর্যন্ত পরিকল্পনা পরিবর্তন হতে পারে। সেই সম্ভবনাও আছে। এখন শুধু ভোরের অপেক্ষা।

নীলা তাকিয়ে আছে আকাশের দিকে। দূরে কোথাও পাখি ডাকছে। ঘুমে চোখ বুজে আসছে। সৈকতও তার বাসার বারান্দায় দাড়িয়ে আকাশ দেখছে। ধীরে ধীরে পরিস্কার হয়ে যাওয়া আকাশ। চোখে ক্লান্তি। ঘুমের জন্য ক্লান্তি। সেই ক্লান্তি আকাশে ছড়িয়ে পড়েছে। সৈকত তা মুগ্ধ হয়ে দেখছে।

Comments

Popular posts from this blog

রহস্যময় ভালবাসা

ভুমিকা ভুমিকা সাধারনত উপন্যাসের হয় কিংবা রচনা জাতীয় কোনো লেখায় হয়। একটা গল্পের জন্য ভুমিকা লেখা হাস্যকর। তবুও লিখলাম। এই গল্পের সাথে বাস্তবের কোনো মিল নেই। এটা শুধুই কল্পনা দিয়ে লেখা। তবে নাম গুলোর অস্থিত্ত্ব আছে। ভুতের গল্প লিখতে চেয়েছিলাম। যে গল্প মাথায় ছিল সেটা তেমন ভয়ঙ্কর বলে আমার মনে হলো না। কিংবা আমি হয়ত ভয়ঙ্কর কিছু লিখতে পারতাম না। তাই লিখলাম না। আশা করি এই গল্পটা পড়ে খুব বেশি বিরক্ত হবেন না। যদি আপনার ভালো লাগে তাহলে ধন্যবাদ। ভালো না লাগলেও ধন্যবাদ।  ইশতিয়াক আহমেদ চৌধুরী টুটপাড়া ঘোষের ভিটা, খুলনা ২০.০৯.২০১২  উৎসর্গ  একটা মানুষকে কি দুইবার উৎসর্গ করা যায়? এইটা সেই মানুষটার জন্য, যার কাছেই শুধুমাত্র আমি একজন লেখক। যার কাছে আমার ভালো কাজেরও মূল্য আছে, খারাপ কাজেরও মূল্য আছে। আমার অদ্ভুত আচরণে সে বিরক্ত হয়, আসলে সে মুগ্ধ হয় বলে আমার বিশ্বাস।  মানুষটা আমাকে অনেক ভালোবাসে, এত কেন ভালোবাসে, কিভাবে ভালোবাসে, আমি কিছুই জানিনা। আমার প্রিয় হলুদিয়া পাখি একটা মেয়ে কতটা সুন্দর হলে একটা ছেলে মেয়েটার দিকে মন্ত্রমুগ্ধ হয়ে তাকিয়ে থাকে? একটা মেয়ে ঠিক কতটা সুন্দর হলে

Veer Zaara

  Spoiler Alert শুরুতেই ইয়াশ চোপড়ার ম্যাজিকাল কণ্ঠে কবিতা। কবিতা শেষ হওয়া মুহুর্তেই সনু নিগম আর লতা গেয়ে ওঠে আমার প্রিয় সব থেকে ম্যাজিকাল গানটা, “কিউ হাওয়া আজ ইউ গা রা হি হে”। সনুর কণ্ঠের সাথে কণ্ঠ মিলিয়ে স্ক্রিনে চলে আসে আমার প্রিয় সুপারস্টার শাহরুখ খান। সাদা জামা পড়ে সাদা নৌকায় ভেসে প্রকৃতির সাথে মিশে যাওয়ার দৃশ্য আমাকে আজও অনুপ্রেরণা দেয় প্রকৃতির সাথে এভাবে একাত্বতা ঘোষনা করার। মুভির শুরুতেই এই গান মনের মধ্যে একটা প্রশান্তি দেয়। মুভি দেখার আগ্রহ কয়েকগুন বাড়িয়ে দেয়।   এই গান শেষ হওয়া মুহুর্তেই দেখা যায়, বৃদ্ধ বীর প্রতাপ সিং স্বপ্নে জারা হায়াত খানকে গুলি খেতে দেখে ধরফর করে ঘুম ভেঙ্গে উঠে বসে। শাহরুখ খানের এই বৃদ্ধ চরিত্র তার ক্যারিয়ারে উজ্জ্বল নক্ষত্র হয়ে থাকবে আজীবন। ২২ বছর ধরে বীর প্রতাপ সিং নিজেকে জেলে বন্দী করে রেখেছে। এই ২২ বছরে কারো সাথে একটা কথা পর্যন্ত বলেনি। শুধুমাত্র জারার সন্মান রক্ষার্থে। কেউ তার গল্প জানেনা। হঠাৎ একদিন সামিয়া সিদ্দিকি নামের একজন হিউমান রাইটস লয়ার এগিয়ে এলো এই বীর প্রতাপ সিং এর গল্প জানার জন্য। ২২ বছর ধরে যেই মানুষটাকে সবাই কয়েদী নম্বর ৭৮৬ ব

Anveshanam (2020)

No Spoiler মুভির নাম Anveshanam , এটি একটি মালায়ালাম মুভি। মুভিতে একটা দৃশ্য দেখে বহু বছর পরে বুক কেঁপে উঠেছিলো। অত্যন্ত চমৎকার একটা মুভি। সিরিয়াল কিলার রিলেটেড থ্রিলার মুভি দেখতে দেখতে বিরক্ত ধরে গেলে চট করে এই হাসপাতাল পরিবেশে বানানো থ্রিলার মুভিটি দেখে ফেলুন। থ্রিলার মুভির নানান ধরণ আছে। আমার কাছে এই ধরণের থ্রিলার বেশি ভালো লাগে। সব থেকে বেশি ভালো লেগেছে এর ব্যাকগ্রাউন্ড মিউজিক। দূর্দান্ত লেগেছে। প্লট অনুযায়ী পারফেক্ট মিউজিক।   আমি প্রথমে ট্রেইলার দেখেছিলাম। ট্রেইলার অর্ধেক দেখেই আমার আগ্রহ জাগে এবং সাথে সাথে ডাউনলোড দিয়ে দেখতে বসে গেছি। আপনারা চাইলে ট্রেইলারটা দেখে আসতে পারেন। আগ্রহ জাগানোর জন্য প্লট সম্পর্কে একটু বলি। হাসপাতালে একটা বাচ্চা ভর্তি হয়েছে। বলা হচ্ছে বাচ্চাটা এক্সিডেন্ট করেছে। পুলিশ এসে ইনভেস্টিগেশন শুরু করলে দেখা যায় বাচ্চার বাবা মা থেকে শুরু করে প্রত্যেকে প্রত্যেকের জায়গা থেকে মিথ্যা কথা বলছে। কিছু একটা লুকাচ্ছে। কি লুকাচ্ছে? সেটাই রহস্য। এই রহস্যে জানতেই মুভিটা দেখতে হবে।   এই মুভির কোনো রিভিউ আমার চোখে পড়েনি। কিন্তু এই মুভি নিয়ে যথেষ্ট আলোচনা করা উচি