Skip to main content

ফাঁসি

কাশেমকে মঞ্চে উঠানো হয়েছে। এই মঞ্চ যেন তেন মঞ্চ না। ফাঁসির মঞ্চ। কাশেম যখন মঞ্চে প্রথম পা রাখলো তখন তার শরীর শিরশির করে উঠলো। মনে হলো তার পায়ের নিচ থেকে মাটি সরে গেছে। তার হাত বাঁধা। তবে চোখ বাঁধা না। মঞ্চের নিচে একদিকে কাশেমের বাবা মা আর তার ছোট বোন দাড়িয়ে আছে। আর আরেকদিকে দাড়িয়ে আছে সুলতানার বাবা মা আর ভাই। যাকে কাশেম কিছুদিন আগে ধর্ষণ করেছে। এবং তারপরপরই সুলতানা আত্মহত্যা করেছে।

মঞ্চের সামনে শুধু এই দুই পরিবারই না। আরও অসংখ্য মানুষ দাড়িয়ে আছে, কাশেমের ফাঁসি দেখার জন্য। দাড়িয়ে আছে দেশের বিখ্যাত সব পত্রিকার আর টিভি চ্যানেলের অসংখ্য সাংবাদিক আর ক্যামেরাম্যান। এই ফাঁসির দৃশ্য প্রতিটা চ্যানেলে সরাসরি দেখানো হচ্ছে। ছোট ছোট ছেলে মেয়েদের টিভি দেখতে দেওয়া হচ্ছে না। তবে কিছু ছেলে মেয়ে উকি মেরে দেখছে, কেন কি হচ্ছে টিভিতে। দেখার দরকার আছে, এদেরও জানা উচিত, ধর্ষণ কতটা নির্মম এবং গর্হিত কাজ।

কাশেমের সামনে ফাঁসির দড়ি। আর আট মিনিটের মাথায় তার ফাঁসি হবে। তার অনেকে পিপাসা হচ্ছে। কিন্তু পানি তার জন্য নিষিদ্ধ। এই মুহূর্তে তার জন্য সব কিছুই নিষিদ্ধ। কাশেমের বাবা মা হাউমাউ করে কাঁদছে। তার ছোট বোনটা নিথর হয়ে আছে। যে মেয়েটাকে কাশেম ধর্ষণ করেছে সে তারই বয়সী। সে কোনোভাবেই মানতে পারছে না, তার বড়ভাই এটা কিভাবে করলো? কেন করলো? তার কি তার আদরের বোনের কথা একবারও মনে হলো না? একটা মানুষ এভাবে পশু হয়?

অন্যদিকে সুলতানার বাবা মা আর ভাই চোয়াল শক্ত করে দাড়িয়ে আছে। চোখ লাল করে তাকিয়ে আছে হাত বাঁধা, পিপাসায় কাতর মানুষটির দিকে। তারা এতটা শক্ত হয়ে দাড়িয়ে আছে মনে হচ্ছে সুলতানার আত্মা তাদেরকে জড়িয়ে ধরে আছে। যখন কাশেমের ফাঁসি হয়ে যাবে তখন সুলতানার আত্মা তাদের ছেড়ে দিবে। সুলতানার মায়ের চোখ দিয়ে পানি পড়ছে। তিনি একবারও চোখ মুছছেন না। ভিজুক। ভিজে ধুয়ে যাক কিছুটা কষ্ট। চোখের পানিতে তিনি অস্পষ্ট দেখছেন, তবুও চোখ মুছছেন না।

যে মাঠে কাশেমের ফাঁসি হচ্ছে। সেই মাঠ নিস্তব্ধ। কেউ কোনো কথা বলছে না। এমনটা হয়না। কিছু মানুষ একত্রিত হলে কথা হবেই। কিন্তু এখানে হচ্ছে না। সবাই চুপচাপ দাড়িয়ে দেখছে, নির্মম অপরাধের শাস্তি কতটা নির্মম ভাবে দেওয়া হয়। কিছু মানুষ ভাবছে কাশেমের এই শাস্তি হবার পরে কি আর কেউ এই অপরাধ করার সাহস পাবে? চিন্তা করার সাহস পাবে কিনা সেটাই সন্দেহ।

আর প্রায় এক মিনিট বাকি আছে। কাশেম হঠাৎ তার সামনে ফাঁসির দড়ির ওপাশে সুলতানাকে দেখতে পেলো। মেয়েটি তার দিকে এক দৃষ্টি দিয়ে তাকিয়ে আছে। হঠাৎ কাশেম ভয়ে আরও বেশি কুঁকড়ে গেলো। মৃত্যু ভয় যেটা হচ্ছিল কিছু আগে, সেটা এই ভয়ের কাছে কিছুই না। এই ভয়ের জন্ম অন্য কোনো পৃথিবীতে। হঠাৎ কাশেমের কানে কানে কে যেন বলে উঠলো, "মরার আগে সাবধান করে দিয়ে যা। বলে যা এই পাপের ফল পাপীকে ছাড়বে না।" তারপরে আরও কিছু একটা বলল, কিন্তু সেটা সে বুঝল না। শুধু সে হাউমাউ করে কেঁদে উঠলো আর চিৎকার করে বলল, "তোমরা আর কেউ এই পাপ করো না। এই পাপের ফল তোমাদের পিছু ছাড়বে না। তোমরা কোথাও গিয়ে নিস্তার পাবে না।"

কথা বলা শেষ হতে না হতেই, তার মুখ কালো কাপড় দিয়ে ঢেকে দেওয়া হলো। এবং ফাঁসির দড়িতে ঝুলিয়ে দেওয়া হলো। ঠিক এই মুহূর্তেই সারা দেশের মানুষ কিছুক্ষণের জন্য স্তব্ধ হয়ে গেলো। কাশেমের বাবা মা আর বোন কাঁদতে কাঁদতে হাঁটু ভেঙ্গে মাটিতে বসে পড়লো। সুলতানার আত্মা সুলতানার বাবা মা আর ভাইকে ছেড়ে চলে গেলো। আর কাশেম কিছুটা ভয় কিছু পুরুষের মনে ঢুকিয়ে দিয়ে গেলো যে ভয়ের জন্ম আসলেই অন্য পৃথিবীতে।

Comments

Popular posts from this blog

রহস্যময় ভালবাসা

ভুমিকা ভুমিকা সাধারনত উপন্যাসের হয় কিংবা রচনা জাতীয় কোনো লেখায় হয়। একটা গল্পের জন্য ভুমিকা লেখা হাস্যকর। তবুও লিখলাম। এই গল্পের সাথে বাস্তবের কোনো মিল নেই। এটা শুধুই কল্পনা দিয়ে লেখা। তবে নাম গুলোর অস্থিত্ত্ব আছে। ভুতের গল্প লিখতে চেয়েছিলাম। যে গল্প মাথায় ছিল সেটা তেমন ভয়ঙ্কর বলে আমার মনে হলো না। কিংবা আমি হয়ত ভয়ঙ্কর কিছু লিখতে পারতাম না। তাই লিখলাম না। আশা করি এই গল্পটা পড়ে খুব বেশি বিরক্ত হবেন না। যদি আপনার ভালো লাগে তাহলে ধন্যবাদ। ভালো না লাগলেও ধন্যবাদ।  ইশতিয়াক আহমেদ চৌধুরী টুটপাড়া ঘোষের ভিটা, খুলনা ২০.০৯.২০১২  উৎসর্গ  একটা মানুষকে কি দুইবার উৎসর্গ করা যায়? এইটা সেই মানুষটার জন্য, যার কাছেই শুধুমাত্র আমি একজন লেখক। যার কাছে আমার ভালো কাজেরও মূল্য আছে, খারাপ কাজেরও মূল্য আছে। আমার অদ্ভুত আচরণে সে বিরক্ত হয়, আসলে সে মুগ্ধ হয় বলে আমার বিশ্বাস।  মানুষটা আমাকে অনেক ভালোবাসে, এত কেন ভালোবাসে, কিভাবে ভালোবাসে, আমি কিছুই জানিনা। আমার প্রিয় হলুদিয়া পাখি একটা মেয়ে কতটা সুন্দর হলে একটা ছেলে মেয়েটার দিকে মন্ত্রমুগ্ধ হয়ে তাকিয়ে থাকে? একটা মেয়ে ঠিক কতটা সুন্দর হলে

Veer Zaara

  Spoiler Alert শুরুতেই ইয়াশ চোপড়ার ম্যাজিকাল কণ্ঠে কবিতা। কবিতা শেষ হওয়া মুহুর্তেই সনু নিগম আর লতা গেয়ে ওঠে আমার প্রিয় সব থেকে ম্যাজিকাল গানটা, “কিউ হাওয়া আজ ইউ গা রা হি হে”। সনুর কণ্ঠের সাথে কণ্ঠ মিলিয়ে স্ক্রিনে চলে আসে আমার প্রিয় সুপারস্টার শাহরুখ খান। সাদা জামা পড়ে সাদা নৌকায় ভেসে প্রকৃতির সাথে মিশে যাওয়ার দৃশ্য আমাকে আজও অনুপ্রেরণা দেয় প্রকৃতির সাথে এভাবে একাত্বতা ঘোষনা করার। মুভির শুরুতেই এই গান মনের মধ্যে একটা প্রশান্তি দেয়। মুভি দেখার আগ্রহ কয়েকগুন বাড়িয়ে দেয়।   এই গান শেষ হওয়া মুহুর্তেই দেখা যায়, বৃদ্ধ বীর প্রতাপ সিং স্বপ্নে জারা হায়াত খানকে গুলি খেতে দেখে ধরফর করে ঘুম ভেঙ্গে উঠে বসে। শাহরুখ খানের এই বৃদ্ধ চরিত্র তার ক্যারিয়ারে উজ্জ্বল নক্ষত্র হয়ে থাকবে আজীবন। ২২ বছর ধরে বীর প্রতাপ সিং নিজেকে জেলে বন্দী করে রেখেছে। এই ২২ বছরে কারো সাথে একটা কথা পর্যন্ত বলেনি। শুধুমাত্র জারার সন্মান রক্ষার্থে। কেউ তার গল্প জানেনা। হঠাৎ একদিন সামিয়া সিদ্দিকি নামের একজন হিউমান রাইটস লয়ার এগিয়ে এলো এই বীর প্রতাপ সিং এর গল্প জানার জন্য। ২২ বছর ধরে যেই মানুষটাকে সবাই কয়েদী নম্বর ৭৮৬ ব

Anveshanam (2020)

No Spoiler মুভির নাম Anveshanam , এটি একটি মালায়ালাম মুভি। মুভিতে একটা দৃশ্য দেখে বহু বছর পরে বুক কেঁপে উঠেছিলো। অত্যন্ত চমৎকার একটা মুভি। সিরিয়াল কিলার রিলেটেড থ্রিলার মুভি দেখতে দেখতে বিরক্ত ধরে গেলে চট করে এই হাসপাতাল পরিবেশে বানানো থ্রিলার মুভিটি দেখে ফেলুন। থ্রিলার মুভির নানান ধরণ আছে। আমার কাছে এই ধরণের থ্রিলার বেশি ভালো লাগে। সব থেকে বেশি ভালো লেগেছে এর ব্যাকগ্রাউন্ড মিউজিক। দূর্দান্ত লেগেছে। প্লট অনুযায়ী পারফেক্ট মিউজিক।   আমি প্রথমে ট্রেইলার দেখেছিলাম। ট্রেইলার অর্ধেক দেখেই আমার আগ্রহ জাগে এবং সাথে সাথে ডাউনলোড দিয়ে দেখতে বসে গেছি। আপনারা চাইলে ট্রেইলারটা দেখে আসতে পারেন। আগ্রহ জাগানোর জন্য প্লট সম্পর্কে একটু বলি। হাসপাতালে একটা বাচ্চা ভর্তি হয়েছে। বলা হচ্ছে বাচ্চাটা এক্সিডেন্ট করেছে। পুলিশ এসে ইনভেস্টিগেশন শুরু করলে দেখা যায় বাচ্চার বাবা মা থেকে শুরু করে প্রত্যেকে প্রত্যেকের জায়গা থেকে মিথ্যা কথা বলছে। কিছু একটা লুকাচ্ছে। কি লুকাচ্ছে? সেটাই রহস্য। এই রহস্যে জানতেই মুভিটা দেখতে হবে।   এই মুভির কোনো রিভিউ আমার চোখে পড়েনি। কিন্তু এই মুভি নিয়ে যথেষ্ট আলোচনা করা উচি