হঠাৎ রাতে
উৎসর্গঃ
সাদমান নাজিম
তোর সাথে এই গল্পের কোনো সম্পর্ক নেই। লিখছিলাম, হঠাৎ পাশে তাকিয়ে দেখি আজ তোর জন্মদিন। লিখতে লিখতে তোরে মিস করছিলাম। তুই এমন একজন মানুষ যাকে ভালো লাগে কিন্তু তাকে নিয়ে কিছু লেখা যায় না। ভালো থাকিস। শুভ জন্মদিন।
কিছু পুলিশ রিক্সা থামাল। "ওই খাড়া। কই যাস, খাড়া।" আমি ততক্ষণে কাঁপছি। ভয়ে না, শীতে। রাত প্রায় দুইটা। জায়গাটা বেশ ফাঁকা। সামনে মিরপুর। রিক্সা থামল। ওরা ছিল ৫ জন। একজন কাছে এসে আমার দিকে তাকিয়ে বলল, "কি? এত রাতে কি? কই যাস?" আমি বললাম, "স্যার, বাসায় যাই।"
স্যার বললেন, "নাম তুই। তোর বাসা কই?" আমি নামতে নামতে বললাম, "স্যার, শ্যামলী।"
এত রাতে বাইরে কি করিস?
স্যার, গার্লফ্রেন্ডের বাড়ির সামনে গেছিলাম। সরি বলতে। মনে হয় সম্পর্কটা টিকবে না।
ফাজলামি করস? খাইসত কিছু?
না স্যার, খুব ক্ষুধা লাগছে। এক প্লেট গরম ভাত হলে চলত।
হঠাৎ চোখে মুখে আন্ধার দেখলাম এবং আমার মুখ যে কোনো কারনেই হোক এখন রিক্সাওয়ালার দিকে। কারনটা সাধারন। চড় খেয়েছি। গরম ভাতে বদলে চড়। ওদের মধ্যে থেকে একজন রিক্সাওয়ালাকে চলে যেতে বলল। রিকশাওয়ালা চলে গেলো। এদিকে এই শীতেও আমার দুই কান গরম হয়ে আছে। একজন বলল, "স্যার, মাল খেয়ে আসছে। চেক করেন, মাল আছে কিনা।" সেই স্যার আমার জ্যাকেটের কলার ধরে বলল, "টাকা পয়সা মোবাইল যা আছে বের কর।" বুঝলাম না, একজন মাল বের করতে বলল, আর একজন টাকা পয়সা মোবাইল। আমি বললাম, স্যার, "আপনারা কি আসলেই পুলিশ? নাকি ডাকাত?"
আবার চোখে মুখে আন্ধার দেখলাম। একজন পিছন থেকে আমাকে ধরল। একজন আমার পকেট হাতালো। মালের জন্য, নাকি টাকা পয়সার জন্য বুঝলাম না। আর একজন সমানে কিল ঘুষি লাত্থি মারতে লাগলো।
কিছুক্ষণ পর আমি আবিষ্কার করলাম আমার আসেপাশে কেউ নেই। পিনড্রপ সাইলেন্স। সেই সাথে আমার পকেটও ফাঁকা। মোবাইল মানিব্যাগ কিছু নেই। কোনোরকমে উঠে হাটতে শুরু করলাম। রাত শুরু হলো রিজেক্ট দিয়ে। প্রথমে গার্লফ্রেন্ড। তারপর পুলিশ। কম্বিনেশনটা খারাপ না।
আমি হাঁটছি। অদ্ভুত পরিবেশ। সাদা কুয়াশা। হলুদ আলো। হঠাৎ কে যেন বলে উঠলো, "মামা লাইটার হবে?" কে বলছে জানিনা। কোথা থেকে বলছে জানিনা। আমি না দাড়িয়ে হাঁটতে হাঁটতেই বললাম, "মামা কি সত্যিকারের ডাকাত? কিচ্ছু নাই মামা। ফাঁদ পেতে লাভ নাই।"
আর কোনো কথা নেই। আমি হাঁটতে থাকলাম। শহরটা অদ্ভুত। রাতের শহরে কোনো মায়া নেই। দিনের শহরে কোনো ক্লান্তি নেই। দিনে ক্লান্তিরা হারিয়ে যায় আর রাতে মায়া। এরা এতিম। সম্পর্কে ঘুণ ধরিয়ে দিয়ে দূর থেকে বসে দেখে। কখনো খিলখিল করে হাসে। কখনো চুপচাপ কাঁদে। আমরা বুঝতে পারি না।
আবার দূর থেকে যেন কারা আসছে। ছায়া মানব। এবার ৪ জন। তাদের হাটায় ক্লান্তি নেই। মায়া নেই। আমি এগিয়ে যাচ্ছি। কিছুটা কাঁপছি, ভয়ে না, শীতে। থাক পরিচিতরা নীরবে, আজ রাতটা দিয়ে দিলাম তাদের।
Comments
Post a Comment