Skip to main content

অল্প সময়, অল্প প্রেম

বিয়ে বাড়ি মানেই খাওয়াদাওয়া, লাইটিং, সাজগোজ এইসব। কারো কাছে বিদায়ের অনুষ্ঠান। কারো কাছে কাউকে পাওয়ার অনুষ্ঠান। কেউ আসে বোরহানি খেতে, কেউ রোস্ট। কিন্তু আমার কাছে বিয়েবাড়ি মানে প্রেমে পড়া। তখন আমি বিয়েবাড়ি যেতাম কারো না কারো প্রেমে পড়তে। এমন করে কত প্রেমে পড়েছি তা প্রায় অজানা।

একবারের গল্প বলি। গেলাম পরিচিত কারো বিয়ে খেতে (মনে নেই, কে ছিল)। প্রচুর সাজগোজ, প্রচুর লাইটিং। আমি রিক্সা থেকে নেমেই এদিক ওদিক করছি। বুঝতেই পারছেন কেন।

বাড়ির ভিতরে পা রাখলাম। সাথে সাথেই আমার ভিতরে কি যেন একটা কাজ শুরু করলো, বলে বোঝানো যাবেনা। মনটা আরও বেশি চঞ্চল হয়ে গেলো। চলে গেলাম বউকে যেখানে রাখা হয়েছে সেখানে। গিয়েই হতভম্ব হয়ে গেলাম। মুগ্ধ হয়ে গেলাম। যে কারনে এসেছিলাম, সেটাই হলো। প্রেমে পড়ে গেলাম। ভাবছেন বউয়ের প্রেমে পড়ে গেছি। নাহ, বউয়ের পাশে বসে থাকা বউয়ের ছোট বোনের প্রেমে পড়েছি। মনে মনে হাসলাম, খুবই কমন একটা ব্যাপার। বউয়ের ছোটবোনকে ভাল লাগবে এটাই স্বাভাবিক। আমার মতই বয়স। এই ১৪ কিংবা ১৫ হবে। খুব লক্ষ্য করে দেখছিলাম তার কানের দুলটা তার হাসির সাথেই কিভাবে দুলছিল। সেকেন্ড যায় আর আমি মুগ্ধ হই। সে হাসে, তার কানের দুল দোলে, তার চুড়িতে শব্দ হয়। আমি মুগ্ধ হয়ে দেখি, শুনি। আরও বেশি করে প্রেমে পড়ি।

অসম্ভব এই চঞ্চল মেয়েটা একবার এই ঘর তো আরেকবার ওই ঘর করছিল। আর আমি তার পিছু পিছু ঘুরছিলাম। কিন্তু সে একবারের জন্য সেটা বুঝতে পারেনি। হাজার হোক, দেখতে তো খুব একটা সুন্দর ছিলাম না। সে হাঁটছে আর আমি তার পিছু পিছু হাঁটছি। তার পায়ের নূপুর দেখছি। কখনো তার হাসি দেখছি।

সে সিঁড়ি দিয়ে উঠছে, হঠাৎ মনে হলে তার মাজায় হাত দিয়ে বুকে টেনে নেই। কিছুনা, বুকে টেনে নিয়ে শুধু একবার বলব, “তুমি এত সুন্দর কেন?” আমি তার পিছু পিছু হাঁটছি। আমার হাত জোড়া পিছনে বাধা। মুখে “কি সব ভাবছি” টাইপ হাসি। তারপরেই তার দিকে তাকাচ্ছি। দেখছি তার চোখের চাহনি। সে চাহনিতে সবই আছে কিন্তু আমার জন্য কোনো স্থান নেই।

হঠাৎ তাকে হারিয়ে ফেললাম। পলকের মধ্যে সে কোথায় গেলো? আমি তখন ছাদে। বউয়ের স্টেজ যেখানে করা হয়েছে। সবাই আনন্দিত। আমার মন খারাপ। আমি দারিয়ে আছি ছাদের এক কোনায়। ভাবছি যদি ওর সাথে কথা হয় তাহলে কি বলবো? সে কি বলবে?
- তুমি তো অনেক বেয়াদপ। সে সন্ধ্যা থেকে দেখছি আমার পিছু পিছু ঘুরছো।
- তোমার নূপুরটা অনেক খারাপ। তার জন্য তোমার পা ঠিক মত দেখতে পারছি না।
- কি? কি বলো যাতা?
- ভাবছি তোমাকে রোদের আলোয় দেখতে কেমন লাগবে।
- মানে কি? তোমার নাম কি?
- নাম দিয়ে কি হবে? আমিও তো তোমার নাম জানিনা। তাতে কি হয়েছে? আমি যে তোমার হাসির প্রেমে পড়ে গেছি।

এই কথা বলার পরেই সে বিরক্ত নিয়ে আমাকে দেখবে তারপর সে পিছন ঘুরে চলে যাবে। আর আমি আবারও মুগ্ধ হবো। আবারও প্রেমে পড়বো।

মেয়েটার সাথে যে কথা হয়নি তা না। হয়েছিলো। খাওয়ার সময় টেবিলে এসেছিলো। আমাকে অবাক করে দিয়ে জিজ্ঞাসা করেছিল, “আর কিছু লাগবে?” আমি মনে মনে বলেছিলাম, “হ্যাঁ, তোমাকে লাগবে। একটু কথা বলবো।” আর মুখে বলেছিলাম, “না।” সে মিষ্টি একটা হাসি দিয়ে চলে গেলো। আমি আবারও প্রেমে পড়ে গেলাম। বুকে ব্যাথা হলো। আমি তাকিয়ে রইলাম। দেখতে লাগলাম তার চলে যাওয়া।

একটা মানুষ এক জীবনে কতবার প্রেমে পড়ে? আমার মনে হয় বহুবার। তবে ভালোবাসে একবার। বিয়েবাড়ি চলে আসার পরে দুইদিন মেয়েটাকে নিয়ে আবোলতাবোল ভেবেছিলাম। হঠাৎ গায়েব। ভুলেই গেলাম তাকে। আবার নতুন প্রেম। নতুন গল্প। তবে এখন আর প্রেমে পড়িনা। এখন ভালোবাসি। এখনও আমি মুগ্ধ হই। তবে অচেনা কাউকে দেখে না। চেনা কাউকে দেখেই।

Comments

Popular posts from this blog

রহস্যময় ভালবাসা

ভুমিকা ভুমিকা সাধারনত উপন্যাসের হয় কিংবা রচনা জাতীয় কোনো লেখায় হয়। একটা গল্পের জন্য ভুমিকা লেখা হাস্যকর। তবুও লিখলাম। এই গল্পের সাথে বাস্তবের কোনো মিল নেই। এটা শুধুই কল্পনা দিয়ে লেখা। তবে নাম গুলোর অস্থিত্ত্ব আছে। ভুতের গল্প লিখতে চেয়েছিলাম। যে গল্প মাথায় ছিল সেটা তেমন ভয়ঙ্কর বলে আমার মনে হলো না। কিংবা আমি হয়ত ভয়ঙ্কর কিছু লিখতে পারতাম না। তাই লিখলাম না। আশা করি এই গল্পটা পড়ে খুব বেশি বিরক্ত হবেন না। যদি আপনার ভালো লাগে তাহলে ধন্যবাদ। ভালো না লাগলেও ধন্যবাদ।  ইশতিয়াক আহমেদ চৌধুরী টুটপাড়া ঘোষের ভিটা, খুলনা ২০.০৯.২০১২  উৎসর্গ  একটা মানুষকে কি দুইবার উৎসর্গ করা যায়? এইটা সেই মানুষটার জন্য, যার কাছেই শুধুমাত্র আমি একজন লেখক। যার কাছে আমার ভালো কাজেরও মূল্য আছে, খারাপ কাজেরও মূল্য আছে। আমার অদ্ভুত আচরণে সে বিরক্ত হয়, আসলে সে মুগ্ধ হয় বলে আমার বিশ্বাস।  মানুষটা আমাকে অনেক ভালোবাসে, এত কেন ভালোবাসে, কিভাবে ভালোবাসে, আমি কিছুই জানিনা। আমার প্রিয় হলুদিয়া পাখি একটা মেয়ে কতটা সুন্দর হলে একটা ছেলে মেয়েটার দিকে মন্ত্রমুগ্ধ হয়ে তাকিয়ে থাকে? একটা মেয়ে ঠিক কতটা সুন্দর হলে

Veer Zaara

  Spoiler Alert শুরুতেই ইয়াশ চোপড়ার ম্যাজিকাল কণ্ঠে কবিতা। কবিতা শেষ হওয়া মুহুর্তেই সনু নিগম আর লতা গেয়ে ওঠে আমার প্রিয় সব থেকে ম্যাজিকাল গানটা, “কিউ হাওয়া আজ ইউ গা রা হি হে”। সনুর কণ্ঠের সাথে কণ্ঠ মিলিয়ে স্ক্রিনে চলে আসে আমার প্রিয় সুপারস্টার শাহরুখ খান। সাদা জামা পড়ে সাদা নৌকায় ভেসে প্রকৃতির সাথে মিশে যাওয়ার দৃশ্য আমাকে আজও অনুপ্রেরণা দেয় প্রকৃতির সাথে এভাবে একাত্বতা ঘোষনা করার। মুভির শুরুতেই এই গান মনের মধ্যে একটা প্রশান্তি দেয়। মুভি দেখার আগ্রহ কয়েকগুন বাড়িয়ে দেয়।   এই গান শেষ হওয়া মুহুর্তেই দেখা যায়, বৃদ্ধ বীর প্রতাপ সিং স্বপ্নে জারা হায়াত খানকে গুলি খেতে দেখে ধরফর করে ঘুম ভেঙ্গে উঠে বসে। শাহরুখ খানের এই বৃদ্ধ চরিত্র তার ক্যারিয়ারে উজ্জ্বল নক্ষত্র হয়ে থাকবে আজীবন। ২২ বছর ধরে বীর প্রতাপ সিং নিজেকে জেলে বন্দী করে রেখেছে। এই ২২ বছরে কারো সাথে একটা কথা পর্যন্ত বলেনি। শুধুমাত্র জারার সন্মান রক্ষার্থে। কেউ তার গল্প জানেনা। হঠাৎ একদিন সামিয়া সিদ্দিকি নামের একজন হিউমান রাইটস লয়ার এগিয়ে এলো এই বীর প্রতাপ সিং এর গল্প জানার জন্য। ২২ বছর ধরে যেই মানুষটাকে সবাই কয়েদী নম্বর ৭৮৬ ব

Anveshanam (2020)

No Spoiler মুভির নাম Anveshanam , এটি একটি মালায়ালাম মুভি। মুভিতে একটা দৃশ্য দেখে বহু বছর পরে বুক কেঁপে উঠেছিলো। অত্যন্ত চমৎকার একটা মুভি। সিরিয়াল কিলার রিলেটেড থ্রিলার মুভি দেখতে দেখতে বিরক্ত ধরে গেলে চট করে এই হাসপাতাল পরিবেশে বানানো থ্রিলার মুভিটি দেখে ফেলুন। থ্রিলার মুভির নানান ধরণ আছে। আমার কাছে এই ধরণের থ্রিলার বেশি ভালো লাগে। সব থেকে বেশি ভালো লেগেছে এর ব্যাকগ্রাউন্ড মিউজিক। দূর্দান্ত লেগেছে। প্লট অনুযায়ী পারফেক্ট মিউজিক।   আমি প্রথমে ট্রেইলার দেখেছিলাম। ট্রেইলার অর্ধেক দেখেই আমার আগ্রহ জাগে এবং সাথে সাথে ডাউনলোড দিয়ে দেখতে বসে গেছি। আপনারা চাইলে ট্রেইলারটা দেখে আসতে পারেন। আগ্রহ জাগানোর জন্য প্লট সম্পর্কে একটু বলি। হাসপাতালে একটা বাচ্চা ভর্তি হয়েছে। বলা হচ্ছে বাচ্চাটা এক্সিডেন্ট করেছে। পুলিশ এসে ইনভেস্টিগেশন শুরু করলে দেখা যায় বাচ্চার বাবা মা থেকে শুরু করে প্রত্যেকে প্রত্যেকের জায়গা থেকে মিথ্যা কথা বলছে। কিছু একটা লুকাচ্ছে। কি লুকাচ্ছে? সেটাই রহস্য। এই রহস্যে জানতেই মুভিটা দেখতে হবে।   এই মুভির কোনো রিভিউ আমার চোখে পড়েনি। কিন্তু এই মুভি নিয়ে যথেষ্ট আলোচনা করা উচি