কোনো এক বর্ষায়

তখন ঝুম বর্ষা হচ্ছে। আমি পারমিতাকে নিয়ে দাড়িয়ে আছি একটা বাড়ির গেটের সামনে। আমাদের মাথার উপর কংক্রিটের ছোট ছাউনি। কোনো মতে বর্ষা থেকে রক্ষা। আমার কাছে স্বর্গ। খুব কাছাকাছি দাড়িয়ে আমরা। কিছুক্ষণ আগে পারমিতা কাঁদছিল। তার চোখের জলে কাজল লেপটে আছে। অদ্ভুত লাগছে দেখতে। অদ্ভুত লাগার মত কোনো ব্যাপার না। তারপরেও মুগ্ধ হয়ে দেখছি। ওর সব কিছুই খুব অদ্ভুত। খুব গভীর ভাবে যখন সে ভাবে তখন তার দুই ঠোটে কিছু ভাজ পড়ে। আমি অবাক হয়ে দেখি। ঠোটে পড়া সামান্য ভাজ এত অদ্ভুত হয় কিভাবে? কিংবা মাঝে মাঝে চোখের পাপড়িতে ভাজ পড়ে। ও যখন চোখ বন্ধ করে, আমি তাকিয়ে থাকি। বর্ননা করার ভাষা পাই না।

পারমিতা মন খারাপ করে দাড়িয়ে আছে। রাস্তার দিকে তাকিয়ে বর্ষার ফোটা পড়া দেখছে। তবে এখন আর কাঁদছে না। আর আমি নির্লজ্জের মত দাড়িয়ে দাড়িয়ে তাকে দেখছি। এটা নিয়ে অবশ্য ওর এখন আর কোনো মাথা ব্যাথা নেই। একবার ঝাড়ি দিয়ে বলেছিল, "এ তোর সমস্যা কিরে? এভাবে কি দেখিস? প্রত্যেকদিন আমার দিকে এভাবে তাকায় থাকার কোনো মানে আছে?" আমি দাত বের করে এক গাল হাসি দিয়ে বলেছিলাম, "তুই বুঝবি নারে। তুই বুঝবি না।" এখন আর কিছু বলে না।

নিরাবতা ভেঙ্গে বললাম, "রিক্সা ডাকবো?" পারমিতা বলল, "না।" আমি বললাম, "ফ্যাচফ্যাচ করে আর কাদিস নাতো।"
- "ক্যান? তোর না আমার কান্না দেখতে ভাল লাগে।"
"হেহে। তা ঠিক, কিন্তু এখন ভাল লাগছে না। কি সুন্দর বর্ষা নামছে আর তুই কানতেছিস। কিছু হইলো?"

পারমিতা কিছু না বলে আমার দিকে তাকিয়ে সেই চিরচেনা চাহনিটা দিল। আমি বললাম, "বাপ, তুই এই লুক আমারে আর দিস না। মরতে মরতে আমি আর নাই। তোরে কত করে বলবো, এই লুক দেখলেই আমি মারা যাই।"

পারমিতা হেসে দিল। বুকের ভিতর মোচড় দিয়ে উঠলো। বললাম, "এই জন্য বলি, আমার সাথে প্রেম কর। তাহলে আজকে আর তোকে কাঁদতে হতো না। কোথাকার কোন পোলা, একটু লম্বা দেখে দৌড় মারছিস। দিছে কাঁদায়? ভালবাসিস বলে পোলা এই যাত্রা বেঁচে গেছে। নাইলে ওখানে মেরে রেখে আসতাম।"

পারমিতা ফিক করে হেসে দিল, "তুই? ওরে মারবি? হাহাহা। তোরে আমার ভালই লাগে এই জন্য। মাঝে মাঝে এমন সব কিউট মার্কা কথা বলিস। পারিস ক্যামনে?"

"মারতে না পারি তো কি হইছে? তোরে হাসাইতে তো পারছি। তোর মন তো ভালো করতে পারছি। আচ্ছা, আমি তো কিউট। ও তো রুড। তাহলে আমার সাথে প্রেম করতে সমস্যা কি?" পারমিতা আমার দিকে তাকিয়ে আছে। আমিও পারমিতার দিকে তাকিয়ে আছি। বললাম, "ভিজবি? বর্ষায়?"

ইলশেগুঁড়ি বর্ষা হচ্ছে। আমি আর পারমিতা হাঁটছি। আমি আড়চোখে ওকে দেখছি। যতবার ওর সাথে দেখা হয় ততবার আমি ওকে নিয়ে একটা করে কবিতা লিখি। আজও লিখবো। আজকের কবিতাটা বিশেষ কিছু হবে। কেন জানিনা। লিখে রাখতে ইচ্ছে হচ্ছে, আমি পারমিতার সাথে ভিজেছিলাম কোনো এক বর্ষায়।

হঠাৎ পারমিতা বলে উঠলো, "সম্ভব হলে তোর সাথে প্রেম করতাম। সম্ভব নারে।" আবার কিছুক্ষণ পরে বলল, "ইশতিয়াক, থ্যাংকস।"

আমি সেদিন চোখের পানি আটকে রেখেছিলাম। মনে মনে প্রার্থনা করেছিলাম যেন সে তার ভালোবাসার মানুষটারে কাছে পায়। কিভাবে যেন আমার প্রার্থনা কবুল হয়েছে। এখন সে তার ভালোবাসার মানুষটাকে নিয়ে আনন্দে আছে। আর এই কিউট মানুষটাকে ভুলে গেছে। ভুলে গেছে তাকে নিয়ে লেখা শত শত কবিতার শত শত লাইন। জীবনটা এত অদ্ভুত কেন? এত রহস্যময় কেন? কেউ জানেনা। জানবেও না।

Comments

Popular posts from this blog

Kabhi Haan Kabhi Naa

রহস্যময় ভালবাসা

Memories of Murder (2003)