Skip to main content

বৃত্তালাপ

এটা কোনো গল্প না। আমি প্রায় এমন হাবিজাবি চিন্তা করি। উর্বর মস্তিষ্কের কল্পনা। এর কোনো ভিত্তি নেই এবং বৃত্তালাপ বলার কারন, যখন এসব ভাবি মনে হয় আমি কোনো বৃত্তের মাঝেই আছি। সবকিছুই বৃত্ত। এমনকি পৃথিবীটাও।

আমি ছাদে শুয়ে আছি। আমার আত্মা আমার শরীরে নেই। কোথায় যেন হারিয়ে গেছে। আমার ঠিক পাশে তাহসান গীটার হাতে বসে আছে। লাল রঙের জামদানী পড়ে তার সাথে মিথিলাও বসে আছে। তারা গান গাইছে। আমি মুগ্ধ হয়ে তাদের গান শুনছি।

যত দূরে থাকো, এত কেন কাছে
শেষ স্পর্শ তোমার, আজও আছে

তারা গান গাইছে। আর আমি তাকিয়ে আছি চাঁদের দিকে। চাঁদের সাথে মেঘের ধরা-ছোঁয়া খেলাটাই আমার কাছে বেশি ভালো লাগে। হটাৎ আমাদের মাঝে রবি ঠাকুর উপস্থিত। তাহসান আর মিথিলা গান বন্ধ করে হতভম্ব হয়ে তাকিয়ে আছে। চাঁদের আলোয় স্পষ্ট রবি ঠাকুরকে বোঝা যাচ্ছে।

রবি ঠাকুর বললেন, "সাগর, তোমাদের বাড়ির সিঁড়িঘরে আলো নেই কেন?" আমি বললাম, "চাঁদের আলোর সামনে নগণ্য বাল্বের আলো মানায় না যে!" তিনি বললেন, "আমি রবীন্দ্রনাথ বলে, আমার সামনে সস্তা সাহিত্য কপচাপে না। তোমাদের অন্ধকার সিঁড়িঘরে আমি উসঠা খেয়ে পড়ে গেছি। কালই আলোর ব্যাবস্থা করবে।" আমি বললাম, "জ্বি গুরু। অবশ্যই।"

রবি ঠাকুর এবার তাহসানের দিকে তাকিয়ে বললেন, "এই ছোকরা, কি গাইছিলে? আবার গাও। ভালোই লাগছিল শুনতে।" তাহসান চিরাচরিত নিয়মে ঢোক গিলে মিথিলার দিকে তাকিয়ে এক সাথেই গাওয়া শুরু করলো;

বলো আমায় ছাড়া সত্যি তুমি হাঁসতে যদি পারো
তবে দূরে থাকো অনেক দূরে হয়ে অন্য কারো

আমি রবিগুরুর দিকে তাকিয়ে বললাম, "আপনাকে খুব ক্লান্ত দেখাচ্ছে, কি ব্যাপার বলুন তো?" তিনি বললেন, "তাও ভালো ক্লান্ত দেখাচ্ছে, নেশাখোর লাগছে না। হিটলারের সাথে দেখা করতে গিয়েছিলাম। কথিত খারাপ জার্মানদের মত তাদের মদও খারাপ। দুই পেগ খেয়েই সব ঝাপসা। ব্যাটা ফাজিল কি বলে জানো? বলে মদে পানি দিয়ে খাওয়া আর নিজের পেশাব খাওয়া সমান কথা। কত্ত বড় ফাজিল। আমার মত সন্মানী মানুষকে এই কথা বলে।"

হতভম্ব হয়ে বসে আছি। সব কিছু মিলিয়ে পরিবেশটা বিদঘুটে হয়ে গেছে। একটু পরিবর্তন দরকার। চশমাটা খুলে চাঁদের দিকে আরেকবার তাকালাম। ঝাপসা তবুও অপূর্ব। ইস, যদি চশমা ছাড়া চাঁদটাকে স্পষ্ট দেখতে পেতাম!

তাহসান গান গেয়েই চলেছে। রবিগুরু মুগ্ধ হয়ে গান শুনছেন আর বলছেন, "বাহ, হুমায়ুনয়ের জন্যই আজ তোমার গান শুনতে পেলাম।" তাহসান বলল, "কেন? কিভাবে?" তিনি বললেন, "হুমায়ুন আমাকে তার উপন্যাসে বিভিন্ন সময় এনে, এখন সে নিজেই হারিয়ে গেছে। কিন্তু আমি আর ফিরে যেতে পারছি না। বলেই অদ্ভুত আর মুগ্ধকর সব কিছু দেখছি আর শুনছি।"

আমি উঠে দাঁড়ালাম। জ্যোৎস্নায় হাঁটার নিয়ম। বিভ্রান্তির মাঝে হাঁটার অন্য একটা আনন্দ আছে। মনে হয়, জ্যোৎস্না গায়ে মাখছে। কিন্তু আসলে মাখছে না। অদ্ভুত।

আমি ঘর ছাড়িয়া বাহির হইয়া, জ্যোৎস্না ধরিতে যাই
হাত ভর্তি চাঁদের আলো, ধরতে গেলেই নাই।

Comments

Popular posts from this blog

রহস্যময় ভালবাসা

ভুমিকা ভুমিকা সাধারনত উপন্যাসের হয় কিংবা রচনা জাতীয় কোনো লেখায় হয়। একটা গল্পের জন্য ভুমিকা লেখা হাস্যকর। তবুও লিখলাম। এই গল্পের সাথে বাস্তবের কোনো মিল নেই। এটা শুধুই কল্পনা দিয়ে লেখা। তবে নাম গুলোর অস্থিত্ত্ব আছে। ভুতের গল্প লিখতে চেয়েছিলাম। যে গল্প মাথায় ছিল সেটা তেমন ভয়ঙ্কর বলে আমার মনে হলো না। কিংবা আমি হয়ত ভয়ঙ্কর কিছু লিখতে পারতাম না। তাই লিখলাম না। আশা করি এই গল্পটা পড়ে খুব বেশি বিরক্ত হবেন না। যদি আপনার ভালো লাগে তাহলে ধন্যবাদ। ভালো না লাগলেও ধন্যবাদ।  ইশতিয়াক আহমেদ চৌধুরী টুটপাড়া ঘোষের ভিটা, খুলনা ২০.০৯.২০১২  উৎসর্গ  একটা মানুষকে কি দুইবার উৎসর্গ করা যায়? এইটা সেই মানুষটার জন্য, যার কাছেই শুধুমাত্র আমি একজন লেখক। যার কাছে আমার ভালো কাজেরও মূল্য আছে, খারাপ কাজেরও মূল্য আছে। আমার অদ্ভুত আচরণে সে বিরক্ত হয়, আসলে সে মুগ্ধ হয় বলে আমার বিশ্বাস।  মানুষটা আমাকে অনেক ভালোবাসে, এত কেন ভালোবাসে, কিভাবে ভালোবাসে, আমি কিছুই জানিনা। আমার প্রিয় হলুদিয়া পাখি একটা মেয়ে কতটা সুন্দর হলে একটা ছেলে মেয়েটার দিকে মন্ত্রমুগ্ধ হয়ে তাকিয়ে থাকে? একটা মেয়ে ঠিক কতটা সুন্দর হলে

Veer Zaara

  Spoiler Alert শুরুতেই ইয়াশ চোপড়ার ম্যাজিকাল কণ্ঠে কবিতা। কবিতা শেষ হওয়া মুহুর্তেই সনু নিগম আর লতা গেয়ে ওঠে আমার প্রিয় সব থেকে ম্যাজিকাল গানটা, “কিউ হাওয়া আজ ইউ গা রা হি হে”। সনুর কণ্ঠের সাথে কণ্ঠ মিলিয়ে স্ক্রিনে চলে আসে আমার প্রিয় সুপারস্টার শাহরুখ খান। সাদা জামা পড়ে সাদা নৌকায় ভেসে প্রকৃতির সাথে মিশে যাওয়ার দৃশ্য আমাকে আজও অনুপ্রেরণা দেয় প্রকৃতির সাথে এভাবে একাত্বতা ঘোষনা করার। মুভির শুরুতেই এই গান মনের মধ্যে একটা প্রশান্তি দেয়। মুভি দেখার আগ্রহ কয়েকগুন বাড়িয়ে দেয়।   এই গান শেষ হওয়া মুহুর্তেই দেখা যায়, বৃদ্ধ বীর প্রতাপ সিং স্বপ্নে জারা হায়াত খানকে গুলি খেতে দেখে ধরফর করে ঘুম ভেঙ্গে উঠে বসে। শাহরুখ খানের এই বৃদ্ধ চরিত্র তার ক্যারিয়ারে উজ্জ্বল নক্ষত্র হয়ে থাকবে আজীবন। ২২ বছর ধরে বীর প্রতাপ সিং নিজেকে জেলে বন্দী করে রেখেছে। এই ২২ বছরে কারো সাথে একটা কথা পর্যন্ত বলেনি। শুধুমাত্র জারার সন্মান রক্ষার্থে। কেউ তার গল্প জানেনা। হঠাৎ একদিন সামিয়া সিদ্দিকি নামের একজন হিউমান রাইটস লয়ার এগিয়ে এলো এই বীর প্রতাপ সিং এর গল্প জানার জন্য। ২২ বছর ধরে যেই মানুষটাকে সবাই কয়েদী নম্বর ৭৮৬ ব

Anveshanam (2020)

No Spoiler মুভির নাম Anveshanam , এটি একটি মালায়ালাম মুভি। মুভিতে একটা দৃশ্য দেখে বহু বছর পরে বুক কেঁপে উঠেছিলো। অত্যন্ত চমৎকার একটা মুভি। সিরিয়াল কিলার রিলেটেড থ্রিলার মুভি দেখতে দেখতে বিরক্ত ধরে গেলে চট করে এই হাসপাতাল পরিবেশে বানানো থ্রিলার মুভিটি দেখে ফেলুন। থ্রিলার মুভির নানান ধরণ আছে। আমার কাছে এই ধরণের থ্রিলার বেশি ভালো লাগে। সব থেকে বেশি ভালো লেগেছে এর ব্যাকগ্রাউন্ড মিউজিক। দূর্দান্ত লেগেছে। প্লট অনুযায়ী পারফেক্ট মিউজিক।   আমি প্রথমে ট্রেইলার দেখেছিলাম। ট্রেইলার অর্ধেক দেখেই আমার আগ্রহ জাগে এবং সাথে সাথে ডাউনলোড দিয়ে দেখতে বসে গেছি। আপনারা চাইলে ট্রেইলারটা দেখে আসতে পারেন। আগ্রহ জাগানোর জন্য প্লট সম্পর্কে একটু বলি। হাসপাতালে একটা বাচ্চা ভর্তি হয়েছে। বলা হচ্ছে বাচ্চাটা এক্সিডেন্ট করেছে। পুলিশ এসে ইনভেস্টিগেশন শুরু করলে দেখা যায় বাচ্চার বাবা মা থেকে শুরু করে প্রত্যেকে প্রত্যেকের জায়গা থেকে মিথ্যা কথা বলছে। কিছু একটা লুকাচ্ছে। কি লুকাচ্ছে? সেটাই রহস্য। এই রহস্যে জানতেই মুভিটা দেখতে হবে।   এই মুভির কোনো রিভিউ আমার চোখে পড়েনি। কিন্তু এই মুভি নিয়ে যথেষ্ট আলোচনা করা উচি