নক্ষত্রের ভালোবাসা
নিসা
হাঁটছে। হাতে একটা কাগজের প্যাকেট। তার মা তাকে ডাউল কিনতে পাঠিয়েছিলো। সে
ডাউল কিনে বাসায় ফিরছে। নিসা হাঁটছে, কিন্তু তার শরীরে কোনো প্রাণ নেই।
চোখের পলক পড়ছে না। তার চোখে কোনো উচ্ছ্বাস নেই। পা টেনে টেনে হাঁটছে। হাত
নড়ছে না। নিসার শরীরটাই আছে। কিন্তু শরীরে কোনো প্রাণ নেই। মাত্র পনেরো
বছর বয়সের এই দুরন্ত কিশোরীকে আজ মৃত বলে মনে হচ্ছে।
এইতো সেদিনও মেয়েটা কি ছটফটে ছিল। এদিক সেদিক দৌড়ে বেড়াতো। প্রতিবেশীর বাচ্চাকে কোলে নিয়ে সারা পাড়ায় ঘুরে বেড়াতো। হাসি ছাড়া কথা বলতে পারতো না। বাবার কাছে হাজারো আবদার করতো। বেচারা তার বাবা ছোটো খাটো একটা চাকরি করে বলে মেয়ের সব আবদার রাখতে পারতো না। তবুও নিসা হাসি মুখে বলতো, “বাবা, আমি এমনি বলেছি। আমার এটা লাগবে না।” বলেই হেসে দিতো। মা কে সারাক্ষণ জ্বালাতো। রান্না ঘরে গিয়ে মা’র সাথে সারাদিন গুটুর গুটুর করে কথা বলতো। কিন্তু, আজ নিসার শরীর থেকে কে যেন তার প্রাণটা বের করে নিয়েছে। নিসার বাবা, মায়েরও দেহে কোনো প্রাণ নেই। তাদের এক মাত্র মেয়ের এমন অবস্থা তারা সহ্য করতে পারছেনা। নিসার দিকে সরাসরি তাকাতে তাদেরকে অন্যের কাছ থেকে সাহস সঞ্চয় করতে হয়।
নিসা প্যাকেটটা তার মা’র হাতে দিলো। মা বলল, “তরকারীটা একটু নাড়তে পারবি?” নিসা তরকারীর দিকে তাকিয়ে মাথা নেড়ে জানালো যে, হ্যাঁ সে পারবে। খুব একটা দরকার না পড়লে সে এখন আর কথা বলে না। সারাক্ষণ চুপ করে পলকহীন ভাবে তাকিয়ে থাকে। নিষ্ঠুর প্রকৃতি তার জীবন থেকে সমস্ত আনন্দ, হাসি কেড়ে নিয়েছে।
রাজু নামের একটি ছেলে কয়েকদিন আগে মারা গেছে। মধ্যবিত্ত পরিবারের ছেলে। সবে এইচ.এস.সি পরীক্ষা দিয়েছে। নিসাকে পাগলের মত ভালোবাসতো। কিন্তু এইচ.এস.সি পরীক্ষা দেবার পরপরই কিছু খারাপ ছেলেদের সাথে মিশে রাজু নেশাখোর হয়ে যায়। যেটা নিসা জানতে পারেনা। রাজু নিসার কাছে পুরো বিষয়টা গোপন রাখে। কিন্তু নিসা বুঝে ফেলে, রাজু কোনো কিছু একটা লুকাচ্ছে তার কাছ থেকে। ভালোবাসার মানুষকে এতটুকু বোঝার ক্ষমতা তার আছে। শেষের দিকে রাজুর অবস্থা খুবই খারাপ পর্যায়ে যায়। নেশার জন্য সে টাকা খুজে পায়না। নেশা করতে না পারলে তার মাথা খারাপের মত হয়ে যায়। তার পরিবারের সবাই অসহায় হয়ে পড়ে। কোনো ভাবেই ছেলেকে তারা নেশার পথ থেকে ফিরিয়ে আনতে পারেনা। তার বোন কাঁদে, মা নিথর হয়ে পড়ে থাকে, বাবা দীর্ঘনিশ্বাস ফেলে দিন গোনে।
যেদিন রাজু মারা যায় সেদিন বিকালে সে নিসার সাথে দেখা করতে যায়। নিসা যখন তার সাথে দেখা করতে আসে, রাজুকে দেখে সে হতভম্ব হয়ে যায়। কি সুন্দর একটা মিষ্টি চেহারার ছেলে, তাকে ভয়ঙ্কর লাগছে দেখতে। রাজু বলল, “টাকা এনেছো?” রাজু নিসাকে ফোন করে পাঁচশো টাকা আনতে বলেছিলো।
“এনেছি। তুমি টাকা দিয়ে কি করবে?”
“সেটা তোমার না জানলেও চলবে। টাকাটা দাও”
“রাজু, তুমি যেন কেমন হয়ে গেছো।”
“আমি আবার কেমন হবো। ভালো আছি আমি। টাকাটা দিলে আরো ভালো থাকবো।”
“আমি তোমাকে ভালোবাসি।”
“হ্যাঁ, হ্যাঁ, আমিও তোমাকে ভালোবাসি। এখন টাকাটা দাও তো।”
নিসার চোখ দিয়ে পানি পড়ছে। রাজুর তা নিয়ে কোনো ভাবান্তর দেখা গেলো না। নিসা মনে মনে বলছে, রাজু অনেক বদলে গেছে। অনেক। নিসা তার ব্যাগ থেকে টাকাটা বের করলো। রাজুর চোখ চকচক করে উঠলো। টাকাটা সে এক প্রকার ছিনিয়ে নিলো। নিয়ে বলল, “এখন বাসায় যাও। আমার কাজ আছে। আমি যাবো।”
“আরেকটু কিছুক্ষণ থাকো। তুমি কতদিন আসো না আমাকে দেখতে। তুমি যেন কেমন হয়ে গেছো। আগের মত আর ভালোবাসো না আমাকে।”
রাজু প্রচণ্ড বিরক্ত হয়ে বলল, “তোমাকে বাসায় যেতে বললাম না। যাও। কাল দেখা করবো।” রাজু চলে গেলো। নিসা তার শেষ কথায় পুরোপুরি স্তব্ধ হয়ে অপলক তাকিয়ে রইলো।
সেই রাতে তার নেশাখোর বন্ধুদেরও নেশা চরম পর্যায়ে উঠেছিলো। তার দুই বন্ধুর কাছে টাকা ছিল না। তারা পরিকল্পনা করে রাজুকে শ্বাসরোধ করে হত্যা করে টাকা নিয়ে পালিয়ে যায়। রাজুর মৃত্যুর খবর শুনে রাজুর পরিবার কান্নায় ভেঙ্গে পড়লো। কিন্তু নিসার কাছ থেকে রাজু তার প্রাণটাও নিয়ে চলে গেলো। নিসা বেঁচে আছে তবে তার প্রাণটা সে রাজুর সাথেই বিসর্জন দিয়ে দিয়েছে।
এখনো তার বাড়ির সামনে পুকুরটাতে শাপলা ফুল ফোটে। জ্যোৎস্নায় ছেঁয়ে থাকে তার বাগান। এখনো তার খাঁচার টিয়া পাখি প্রতিদিন সকালে তার নাম ধরে ডাকে। সবই আছে। কিন্তু শুধু নেই রাজু, আর নেই তার বেঁচে থাকার আকাঙ্ক্ষা। বেঁচে থাকার একটুখানি ইচ্ছা।
এইতো সেদিনও মেয়েটা কি ছটফটে ছিল। এদিক সেদিক দৌড়ে বেড়াতো। প্রতিবেশীর বাচ্চাকে কোলে নিয়ে সারা পাড়ায় ঘুরে বেড়াতো। হাসি ছাড়া কথা বলতে পারতো না। বাবার কাছে হাজারো আবদার করতো। বেচারা তার বাবা ছোটো খাটো একটা চাকরি করে বলে মেয়ের সব আবদার রাখতে পারতো না। তবুও নিসা হাসি মুখে বলতো, “বাবা, আমি এমনি বলেছি। আমার এটা লাগবে না।” বলেই হেসে দিতো। মা কে সারাক্ষণ জ্বালাতো। রান্না ঘরে গিয়ে মা’র সাথে সারাদিন গুটুর গুটুর করে কথা বলতো। কিন্তু, আজ নিসার শরীর থেকে কে যেন তার প্রাণটা বের করে নিয়েছে। নিসার বাবা, মায়েরও দেহে কোনো প্রাণ নেই। তাদের এক মাত্র মেয়ের এমন অবস্থা তারা সহ্য করতে পারছেনা। নিসার দিকে সরাসরি তাকাতে তাদেরকে অন্যের কাছ থেকে সাহস সঞ্চয় করতে হয়।
নিসা প্যাকেটটা তার মা’র হাতে দিলো। মা বলল, “তরকারীটা একটু নাড়তে পারবি?” নিসা তরকারীর দিকে তাকিয়ে মাথা নেড়ে জানালো যে, হ্যাঁ সে পারবে। খুব একটা দরকার না পড়লে সে এখন আর কথা বলে না। সারাক্ষণ চুপ করে পলকহীন ভাবে তাকিয়ে থাকে। নিষ্ঠুর প্রকৃতি তার জীবন থেকে সমস্ত আনন্দ, হাসি কেড়ে নিয়েছে।
রাজু নামের একটি ছেলে কয়েকদিন আগে মারা গেছে। মধ্যবিত্ত পরিবারের ছেলে। সবে এইচ.এস.সি পরীক্ষা দিয়েছে। নিসাকে পাগলের মত ভালোবাসতো। কিন্তু এইচ.এস.সি পরীক্ষা দেবার পরপরই কিছু খারাপ ছেলেদের সাথে মিশে রাজু নেশাখোর হয়ে যায়। যেটা নিসা জানতে পারেনা। রাজু নিসার কাছে পুরো বিষয়টা গোপন রাখে। কিন্তু নিসা বুঝে ফেলে, রাজু কোনো কিছু একটা লুকাচ্ছে তার কাছ থেকে। ভালোবাসার মানুষকে এতটুকু বোঝার ক্ষমতা তার আছে। শেষের দিকে রাজুর অবস্থা খুবই খারাপ পর্যায়ে যায়। নেশার জন্য সে টাকা খুজে পায়না। নেশা করতে না পারলে তার মাথা খারাপের মত হয়ে যায়। তার পরিবারের সবাই অসহায় হয়ে পড়ে। কোনো ভাবেই ছেলেকে তারা নেশার পথ থেকে ফিরিয়ে আনতে পারেনা। তার বোন কাঁদে, মা নিথর হয়ে পড়ে থাকে, বাবা দীর্ঘনিশ্বাস ফেলে দিন গোনে।
যেদিন রাজু মারা যায় সেদিন বিকালে সে নিসার সাথে দেখা করতে যায়। নিসা যখন তার সাথে দেখা করতে আসে, রাজুকে দেখে সে হতভম্ব হয়ে যায়। কি সুন্দর একটা মিষ্টি চেহারার ছেলে, তাকে ভয়ঙ্কর লাগছে দেখতে। রাজু বলল, “টাকা এনেছো?” রাজু নিসাকে ফোন করে পাঁচশো টাকা আনতে বলেছিলো।
“এনেছি। তুমি টাকা দিয়ে কি করবে?”
“সেটা তোমার না জানলেও চলবে। টাকাটা দাও”
“রাজু, তুমি যেন কেমন হয়ে গেছো।”
“আমি আবার কেমন হবো। ভালো আছি আমি। টাকাটা দিলে আরো ভালো থাকবো।”
“আমি তোমাকে ভালোবাসি।”
“হ্যাঁ, হ্যাঁ, আমিও তোমাকে ভালোবাসি। এখন টাকাটা দাও তো।”
নিসার চোখ দিয়ে পানি পড়ছে। রাজুর তা নিয়ে কোনো ভাবান্তর দেখা গেলো না। নিসা মনে মনে বলছে, রাজু অনেক বদলে গেছে। অনেক। নিসা তার ব্যাগ থেকে টাকাটা বের করলো। রাজুর চোখ চকচক করে উঠলো। টাকাটা সে এক প্রকার ছিনিয়ে নিলো। নিয়ে বলল, “এখন বাসায় যাও। আমার কাজ আছে। আমি যাবো।”
“আরেকটু কিছুক্ষণ থাকো। তুমি কতদিন আসো না আমাকে দেখতে। তুমি যেন কেমন হয়ে গেছো। আগের মত আর ভালোবাসো না আমাকে।”
রাজু প্রচণ্ড বিরক্ত হয়ে বলল, “তোমাকে বাসায় যেতে বললাম না। যাও। কাল দেখা করবো।” রাজু চলে গেলো। নিসা তার শেষ কথায় পুরোপুরি স্তব্ধ হয়ে অপলক তাকিয়ে রইলো।
সেই রাতে তার নেশাখোর বন্ধুদেরও নেশা চরম পর্যায়ে উঠেছিলো। তার দুই বন্ধুর কাছে টাকা ছিল না। তারা পরিকল্পনা করে রাজুকে শ্বাসরোধ করে হত্যা করে টাকা নিয়ে পালিয়ে যায়। রাজুর মৃত্যুর খবর শুনে রাজুর পরিবার কান্নায় ভেঙ্গে পড়লো। কিন্তু নিসার কাছ থেকে রাজু তার প্রাণটাও নিয়ে চলে গেলো। নিসা বেঁচে আছে তবে তার প্রাণটা সে রাজুর সাথেই বিসর্জন দিয়ে দিয়েছে।
এখনো তার বাড়ির সামনে পুকুরটাতে শাপলা ফুল ফোটে। জ্যোৎস্নায় ছেঁয়ে থাকে তার বাগান। এখনো তার খাঁচার টিয়া পাখি প্রতিদিন সকালে তার নাম ধরে ডাকে। সবই আছে। কিন্তু শুধু নেই রাজু, আর নেই তার বেঁচে থাকার আকাঙ্ক্ষা। বেঁচে থাকার একটুখানি ইচ্ছা।
Comments
Post a Comment